স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকাbnp_jamat-logo:  আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জামায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন বিএনপি। দিন যতই গড়াচ্ছে বিএনপি’র সাথে জামায়াতের সর্ম্পকের অবনতি বেড়েই চলছে।

এজন্যই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে চলছে তীব্র টানাপোড়েন। বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে। সম্পর্কে টানাপোড়েনের এই তথ্য নিশ্চিত করেছে একাধিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্র।

সূত্রগুলো জানায়, জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত সহিংসতা বন্ধ করতে ১৮ দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়ার ওপর বারবার চাপ সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগ বিদেশি কূটনীতিকদের অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। ক্ষেত্রবিশেষে আওয়ামী লীগ নালিশও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।

নালিশের আলোকেই বিদেশি কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়াকে পরোক্ষভাবে অনুরোধ করেছেন জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে। তবেই সরকারি দলের সঙ্গে ফলপ্রসূ সমঝোতা হতে পারে বলেও তারা আশ্বাস দিয়েছেন।

কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলের কারণে খালেদা জিয়া তার অন্যতম মিত্র জামায়াতকে ত্যাগ করতে পারছিলেন না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক মাঠ দখল এবং আন্দোলনের প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার সামনে জামায়াত-শিবিরের কোনো বিকল্প ছিল না।

জানা গেছে, সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের নেতিবাচক কর্মকা- এবং অব্যাহত প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিদেশি প্রতিনিধিরা। জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়টিই বিশেষভাবে তুলে ধরেন খালেদা জিয়ার কাছে। এর পর থেকে খালেদা জিয়া কৌশলে জামায়াতকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করে।

কিন্তু বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে জামায়াতের শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী গত ক’দিন ধরেই আন্দোলনের মাঠে আর নেই। তারা অনেকটা অভিমান করেই বলেছেন, দেশে অব্যাহত সহিংসতা ঘটাতে শিবির আর মাঠে নামবে না। এভাবে তারা টানা সহিংসতার ইতি টানলেন বলে স্বীকার করেন। তাদের এখন একটাই কথা, বিএনপি মাঠে না নামলে তারা আর মাঠে নামবে না। অযথা আর প্রাণ ঝরাবে না।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ শর্তে জানান, ‘বহু প্রাণ গেছে, আর নয়। অনেক ছাত্রকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। চোখ হারাতে হয়েছে। পুলিশ কাছ থেকে গুলি করেছে, চোখ উপড়ে ফেলেছে ।’ এখন বিএনপি যদি প্রাণ উৎসর্গের মতো ত্যাগ স্বীকার করে, তবেই তারা আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নেবেন বলে জানান ওই শিবির নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা ছাত্রশিবিরের উচ্চ পর্যায়ের আরেক নেতা জানান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইনকে মেরে হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো জেলে চিকিৎসাধীন। দক্ষিণ শাখা ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে।

রিমান্ড থেকে বাঁচার জন্য পুলিশকে টাকা দিতে গিয়েও অনেক পরিবার পথে বসেছে। অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য এখন আর এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে কৌশলে আগাবেন বলে জানান তিনি।

শিবিরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক নেতা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ আমরা পালন করেছি। সারা দেশে আন্দোলনকে আমরাই টিকিয়ে রেখেছি। অনেক নেতার জীবন বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে দেশে আন্দোলন টিকে রয়েছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বিএনপি কর্মীদের মাঠে দেখা না গেলেও তারা টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি ঠিকই করবে।’ তাই তার মতে, একা আর কোনো আন্দোলন নয়। বিএনপি মাঠে নামলেই কেবল শিবির রাজপথে থাকবে।

শিবিরের এমন প্রতিজ্ঞার প্রতিফলনও ঘটেছে বুধবার থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে। এদিন দেশের কোথাও তারা মাঠে নামেনি। ফলে দেশের সার্বিক অবস্থা ছিল অন্যান্য কর্মসূচির তুলনায় অনেক ভালো।