ছাত্রলীগআরিফুল ইসলাম, ঢাকা: ৪ জানুয়ারি শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনোর লক্ষ্যে আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ০১মিনিট (প্রথম প্রহরে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা ও মিষ্টি বিতরন অনুষ্ঠান এবং সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২নম্বরস্থ প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাসব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচি পরবর্তীতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলে সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলা, বাঙালীর স্বাধীনতা ও স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি জন্ম নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠ পোষকতায় এক ঝাঁক সূর্য বিজয়ী তারুণ্যের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৬ বছরের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ৫২’র  ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

৫৪ এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত করে। ৫৮ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে।

৬ দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগ রক্ত দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে এনে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজের পক্ষ হতে বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করে।

৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেন এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার মাধ্যমে স্বাধীনতার বিজয় ছিনিয়ে আনে। বাঙালীর এই মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রলীগের ১৭ হাজার নেতাকর্মী মহামূল্যবান জীবন দান করেছেন।

প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর ইতিহাসের ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯’র বিপুল বীরত্বের লড়াই, ৭১’র বিজয়, ৭৫’র ছিনতাই হয়ে যাওয়া বিজয় পুনরুদ্ধারের অবিরাম সংগ্রাম, ৮১’র ১৭ মে জাতির জ্যোতির্ময় প্রত্যাশার প্রত্যাবর্তন, ৮৩’র ছাত্র আন্দোলন, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী তীব্র আন্দোলন শেষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে ও পুনঃ বন্দীদশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছাত্রলীগের ইতিহাসের অন্যতম সাফল্যমন্ডিত অধ্যায়।

বাঙালী জাতির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান অসামান্য স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালীর ইতিহাস’। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী অপরিমেয় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ১৯৭৫ সালের দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে গ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখে ছাত্রলীগ ।

৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ত্যাগের পরাকাষ্ঠ প্রদর্শন করে বন্দী গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে। যে প্রত্যাশা নিয়ে ৯০’র গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল পরবর্তী সরকার সেই প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক ছিলনা বরং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ছাত্রলীগকে আবার রাজপথে নেমে আসতে হয়। সরকারের জুলুম, নির্যাতনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ৯৬ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরকার গঠন করে।

জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে অল্প সময়ের জন্য দুর্যোগের কালো মেঘ দূরীভূত হয়। সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। ন্ন্যূতম মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পায় দেশের প্রতিটি জনগণ। দূর্ভাগ্য বাঙালী জাতির, দূর্ভাগ্য বাংলার ছাত্রসমাজের।

আবারো ২০০১ সালের ১ অক্টোবর একটি সাজানো নীল নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি-জামায়াত জোটের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রাষ্ট্রের সমস্ত মেশিনারিজকে জনগণের বিপক্ষে ব্যবহারের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সূচিত ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামে নিয়োজিত থেকেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কময় অধ্যায়, তৎকালীন সময়ে ক্ষমতা ছেড়েও পুতুল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিচালনার বিরুদ্ধে বিপুল জনসমর্থন সংগঠিত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারও আগে নিজেদের দলীয় পছন্দের সাবেক দলীয় নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার নীল নকশা ব্যর্থ করে দেয়ার সংগ্রামে ছাত্রলীগ পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা।

অবশেষে ১/১১ পটপরিবর্তনের পর জাতি সাজানো নির্বাচনের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিল। দুই বছর মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো ন্যায় বিচার পায়নি। বরং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, অবিশ্বাস্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক আঘাত এসেছে জুলাই মাসের ১৬ তারিখে।

এদিন তৎকালীন সরকার বিনা অপরাধে বাংলার গণমানুষের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিবাদ করে। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট সংঘটিত ও স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুক্ত করে আনে প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় নেত্রীকে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলার জনগণের গণরায় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে বাংলার মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গণস্বাক্ষরতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ দৃঢ় প্রত্যয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছাত্রসমাজকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

দেশ আজ বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রগতির পথে অপ্রতিরোধ্য ভাবে হেঁটে চলছে। মিয়ানমারের কাছ থেকে অর্জিত দুইশ নটিক্যাল মাইলের সমুদ্রসীমা আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে জন্য সঞ্চিত করে রেখেছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক সম্পদ।

যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে শক্ত অর্থনীতির ভিত্তি গড়তে সহায়তা যোগাবে। আজ আমরা তিন তারকার গৌরবের পতাকা কাঁধে নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত রেখেছি। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানেই ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকারের প্রশ্ন সেখানেই অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্বে দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জনগণের ক্ষমতায়নে দেশরতœ শেখ হাসিনার people empowerment and development model বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দারিদ্র বিমোচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব সফলতা বিশ্ব বিবেকের কাছে বাংলাদেশ প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত হয়েছে।

দারিদ্র বিমোচনের এই সফলতারধারা বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিতের ন্যায় বিরামহীনভাবে কাজ করে চলছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একমাত্র সংগঠন ৬৬বছরের ইতিহাসে ও আধুনিকতার ছোয়ায় তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র ও ঘোষণা পত্র অনুযায়ী প্রকৃত শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং সদস্য ফর্মের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ এবং জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে নেতা নির্বাচন করা হয়।