জামায়াত-ই-ইসলামীফয়েজ মাহমুদ, ঢাকা: জাময়াত-শিবির ৫ই জানুয়ারীর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে নতুন কৌশল বেছে নিয়েছে। তাই ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন ঠেকাতে তারা নতুন করে আবার কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জামায়াতের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়।

জামায়াত এরই মধ্যে বুঝে গেছে নির্বাচন সম্পন্ন হলে তাদের যে নেতারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জেলে আছে তাদের সবারই ফাঁসি দিয়ে দিবে সরকার। তাই যে কোন উপায়ে এ নির্বাচনকে রুখতে প্রয়োজনে সারা দেশে তারা নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টি করবে।

তারা কৌশলে ভোট ঠেকাতে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটদানে বাধা প্রদান করছে। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচির বাইরেও নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তাই জামায়াত-শিবির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেছে।

৫ জানুয়ারি রোববার দেশের ৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিভিন্নএলাকা পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনেও পাঠানোহয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্য মতে, নির্বাচনের ২২ জেলার ৭৫-৮০টি আসন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব নির্বাচনী এলাকায়নেই কোনো নির্বাচনী আমেজ, বরং ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আতঙ্ক। এ ২২টি জেলার মধ্যে আছে- ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শেরপুর, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী,বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী,বাগেরহাট, নাটোর, লালমনিরহাট।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার ঠেকাতে যে কোনো ধরনের তৎপরতা থাকবে।ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মরিয়া সরকার। বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনআওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে তৎপর। অপরদিকে ভোটারের উপস্থিতিঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত। দলটির ফোর্স হিসেবেবরাবরের মতোই মাঠে সক্রিয় থাকবে ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।

অন্যদিকে শুক্রবার খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে নির্বাচনের দিন ও তারআগের দিন ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি। সাথে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ তো আছেই।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমির রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার কথিত নির্বাচনের নামে জনগণ, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথেনির্মম পরিহাসে লিপ্ত হয়েছে। নির্বাচন নামের তামাশায় দেশের কোনো বিরোধী দলই অংশগ্রহণ করেনি।

মহাজোট সরকারের শরিক ও রাজনৈতিক এতিম বামদের নিয়ে সরকার নির্বাচনের নামে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রহসন ও পরিহাসে লিপ্ত হয়েছে। কথিত নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতহওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে জনগণের সাথে কথিত নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

বরং সরকারি এজেন্ডাবাস্তবায়নে আজ্ঞাবহ ও দলবাজ নির্বাচন কমিশন ভাঁড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কমিশন কথিতনির্বাচনের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

তাই নির্বাচননামের এই জাতীয় প্রহসনে অংশগ্রহণ, যেকোনো সাহায্য-সহযোগিতা, নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবেদায়িত্ব পালন ও তামাশার নির্বাচনে যে কোনোভাবে নিজেকে নিয়োজিত করা রীতিমত গণবিরোধীতারশামিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ দলীয় সরকার, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের হাতেক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন কখনোই হতে দেবে না বরং জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করবে। পাতানো, ভোটারবিহীন ও একতরফা নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাবে না। পাতানো নির্বাচনেরসঙ্গে যুক্ত কেউই গণরোষ থেকে বাঁচতে পারবে না।’

নির্বাচন প্রতিহত করার মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে জামায়াত সূত্রে জানা যায়, এই মুহূর্তে যৌথবাহিনীর অভিযান থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাবধানে রয়েছে তারা। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে ভোট কেন্দ্রে না যেতে অনুরোধ করছে। ভোটের দিন সহিংসতা হবে এমন প্রচারণাও চালানোহচ্ছে।

তবে নির্বাচনের আগের দিন থেকে সক্রিয়ভাবে ভোটারদের ভীতি বাড়াতে দলটি সহিংসতা শুরু করবেবলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সাংগঠনিকভাবে যেসব এলাকায় দলের অবস্থান শক্ত সেসব এলাকায় সর্বোচ্চ নাশকতা চালাবে জামায়াত-শিবির।

অবরোধের সময়ের মতো নির্বাচনের আগের দিনে গাছ ফেলেরাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার মতো নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে। এমনকি ব্যালটপেপার বহনে ব্যবহৃত যানবাহনেও আগুন দেয়ার নির্দেশনা আছে। নির্বাচনের কাজেদায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের ওপর হামলার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।