জামায়াত-ই-ইসলামীমান্না আতোয়ার, ঢাকা: আ’লীগের বাকশালী নীল নকশার একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জামায়াত-শিবির নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রাজধানীকে কেন্দ্র্র করে জোটের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালিত হবার কথা থাকলেও তা সফল করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ১৮ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় সকল নেতৃবৃন্দ।

এই ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন উদ্যমে সরকার পতনের টার্গেট নিয়ে রাজধানীকেন্দ্রিক চূড়ান্ত লড়াইয়ে মাঠে নামছে জামায়াত-শিবির।

ইতিমধ্যে ১৮ দল নির্বাচনের আগে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসুচি ঘোষণা করেছেন। ১ম দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ সারা দেশে বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন কোন তৎপরতায় ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।

তাই সর্বোপরি নির্বাচন ঠেকাতে রাজধানীসহ সারা দেশে অবরোধের পাশপাশি ৪৮ ঘন্টার হরতাল আহ্ববান করেছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ ধলীয় জোট। আর এটাকে শেষ সুযোগ বলে মনে করছেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এজন্য জোটের কর্মসূচির আড়ালে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত-শিবির ভয়ঙ্কর প্রস্তুতির পরিক্লপনা করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়।

আগামী ৫ই জানুয়ারীর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতের এবার শত কোটি টাকার বিনিয়োগের খবর ঐ সুত্রে পাওয়া গেছ। চতুর জামায়াত শিবির বুঝতে পেরেছিল নির্বাচনের আগে রাজধানীতে গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রায় আ’লীগ সরকার যে কোন মূল্যে তার পেটুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা প্রতিরোধ করবে। তাই তারা সেদিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও নিরব ভূমিকা পালন করেছে।

জামায়াত-শিবির পর্যালোচনা করেছে যে তাদের ১৮ দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পল্টনের কেন্দ্রীয কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পারে কি না। তার ঐ উপস্থিতির উপর নির্ভর করে রাজধানীসহ সারা দেশে নাশকতার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল জামায়াত-শিবির। তাদের ২৯ ডিসেম্বরের টার্গেট লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলেও এবারের ৫ই জানুয়ারীর পরিকল্পনা যে কোন উপায়ে বাস্তবায়নের জন্য তাই শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

এদিকে ১৮ দলীয় নেতা ও বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন প্রতিহতের এই কর্মসূচিতে জামায়াতের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে চায় বলে জামায়াতের দায়িত্বশীল দুই নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এবং ড. সফিকুল ইসলাম মাসুদকে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

দলের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন জামায়াতকে তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন প্রতিহত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের কথাও বলেন।

এ ব্যাপারে জামায়াতের এক নেতা আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করব। বিএনপি নেতাকর্মীরা কি করছেন বা কিছু করবেন কি না সেদিকে তাকিয়ে থাকবে না আমাদের নেতাকর্মীরা।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই নির্বাচন জনগণ মানে না। নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিতি এতই কম হবে যে, নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তবে তার আশঙ্কা, ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও ম্যানুপুলেট করে ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখানো হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘যত বাধাই আসুক না কেন সব বাধা মোকাবিলা করেই নেতাকর্মীরা ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে যে কোন মূল্যে প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, ১৮ই নভেম্বরের কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা আপনাদের নিশ্চয় অবগত রয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী মাঠে। চাইলে এক ঈশারায় পুরো রাজধানী আমাদের দখলে চলে আসবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন জামায়াতের এ নেতা।

এরই মধ্যে সারা দেশে অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্ত নামে জামায়াত-শিবির। বগুড়ায় ২২ ভোটকেন্দ্রে আগুন ,যশোরে পুলিশের গাড়িতে বোমা আগুন, পুলিশের গুলি, আহত ৯ সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়ে আগুনবরগুনায় ৮টি ভোটকেন্দ্রে আগুনগাইবান্ধায় ব্যালট পেপারে আগুন ফেনীর আরো ৮ ভোটকেন্দ্রে আগুন লক্ষীপুর রামগঞ্জে তিনটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ,

রাজধানীর কদমতলীতে ভোটকেন্দ্র থেকে বোমা উদ্ধার নীলফামারীর তিনটি ভোটকেন্দ্রে আগুন, মাগুরায় নির্বাচনী গাড়ীতে পেট্রলবোমা, ডোমারে তিন ভোটকেন্দ্রে আগুন, আওয়ামী লীগ অফিসে ককটেল এবং সিংড়ায় ভোটকেন্দ্রে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা শুরু করে দিয়েছে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা।