জামায়াতের বর্বরতা বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী জামায়াত শিবিরের সহিংসতা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এ সহিংসতার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সহ আ’লীগের হাজার হাজার পরিবার। এ সহিংসতা বিগত ২০০১ সালের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। দেশজুড়ে এখন সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্কে নাম জামায়াত শিবির।

দশম নির্বাচন শুরুর আগ থেকেই খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে তান্ডব চালিয়েছে তাতে মনে হয় দেশে অরাজকতা চলছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও ঐ সব এলাকায় নিরুপায় হয়ে নিজেদের রক্ষার্থে নিরব ভুমিকা পালন করছে। যে কারনে জামায়াত শিবির অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের দিন কাটছে আতঙ্কে রাত কাটছে শঙ্কায়।

ঠাকুরগাঁওয়ে, যশোর, নোয়াখালীর সোনামুড়ির সংখ্যালযু’র পরিবারগুলো প্রাণের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে মন্দিরে। যশোর এলাকায় সংখ্যালযু পরিবার গত রাত ১২ টার পর থেকে অজানার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার লোক ভৈরব নদী পাড়ি দিয়েছে। তারা যানে না কোথায় তাদের নিরাপদ আশ্রয়। তারা নিজেদের জীবন রক্ষার্থে নিজেদের ভিটাবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন পরিবর্তী সহিসংতা ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে জামায়াত শিবিরের সহস্র ক্যাডার বাহিনী। তাদের এ বর্বরতা তান্ডবে প্রায় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা আহত হন। পাশাপাশি সংখ্যালঘু পরিবারের দোকান পাট ও পাকা স্থাপনা ভাঙচুর করে।

রোববার দশম জাতীয় নির্বাচনের রাতে সদর উপজেলার গড়েয়া গোপালপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দেড়শ পরিবারে  উপর নির্বাচন বিরোধীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা তাদের ৫০টি দোকান ভাংচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ওই  বাজারে অবস্থিত  কালি মন্দির ও বিগ্রহ ভাংচুর করে তারা। সন্ত্রাসী হামলায় ওই গ্রামের নারী পুরুষ আহত হন। ওই রাতেই   প্রাণের ভয়ে ওই গ্রাম সহ আশপাশের ৭/৮টি গ্রামের শত শত হিন্দু নারী পুরুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে একটি মন্দিরে মন্দিরে ঠাই নিয়েছে।

এ খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন সেখানে যৌথ বাহিনী পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছেন। সোমবার দুপুরে সাবেক খাদ্য মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ,জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস, লে. কর্ণেল শামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার  ফয়সল মাহমুদ ও ঠাকুরগাঁও  ৩০বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল কামাল আহম্মেদ ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন।

ঠাকুরাগাঁও জেলা প্রশাসক বলেন, গ্রাম বাসীদের নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে জামায়াতের তান্ডব থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সচেতন জনগনকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে যশোরের অভয়নগরের চাঁপাতলা গ্রামের মালোয়াপাড়ার শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে ১৮ দলের কর্মীরা। এসময় যশোর-চার আসনে পরাজিত প্রার্থী আব্দুল ওহাবের সমর্থকরাও হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার পরপরই শিশু ও মহিলাসহ অন্তত ৬ শতাধিক বাসিন্দা পাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ সময় শুন্য বাড়িতে লুটপাট চালায় হামলাকারীরা। এর আগে ভোটের দিন সকালে এলাকার কিছু লোক এসে তাদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়।

কিন্তু এরপরও ভোট দিতে গেলে সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই হামলার শিকার হন তারা। হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত  কাউকে আটক করতে পারেনি। পুলিশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারনে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে।

অপরদিকে নির্বাচনে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের সদর, যশোরের অভয়নগরের চাঁপাতলায় সংখ্যালঘুদের ৪শ’র বেশি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় যশোরের অভয়নগরের চাঁপাতলা গ্রামে সকালে গ্রামবাসীকে ভোট দিতে যেতে নিষেধ করে নির্বাচনবিরোধীরা।

তারপরও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ভোট দিয়ে আসার পরপরই সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।  ভয়ে গ্রামের ৩শ’রও বেশি মানুষ ভৈরব নদীর ওপারে দিয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দিনাজপুরের একাধিক গ্রামবাসী জানান, দিনাজপুর সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের লোকজন ভোট দিয়ে আসার পরপরই এ হামলা চালানো হয়। নির্বাচন বিরোধীরা গ্রামটির সাহাপাড়া, প্রিতমপাড়া, প্রফুল্লপাড়া, তেলীপাড়া ও অজয়পাড়ায় দফায় দফায় হামলা চালায়। ১ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ৫ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায়। ঘটনার পরপরই স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।