বিএনপিমান্না আতোয়ার,ঢাকা: প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র ত্যাগী তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাদের স্বত:স্ফর্তভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহনের কারণে তাদের কপাল এবার খুলে গেছে।

ইতিমধ্যে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন সেই ত্যাগী আন্দোলনকারী মাঠ পর্যায়ের নেতাদের তালিকা সম্পন্ন করে ফেলেছেন। আন্দোলনের কাঙ্খিত ফসল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন এলেই ঐ তালিকাভূক্ত নেতাদের সর্ববিষয়ে অগ্রাধীকার দেয়া হবে বলে দলীয় বিশেষ সুত্রে জানা গেছে।

সুত্র আরো জানায় বিশেষ করে যারা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন, যারা বন্দুকের গুলিকে তোয়াক্কা না করে সর্বসময় মাঠে ছিলেন, গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে থাকেননি,যারা কোন সময় আঁতাত করেননি,যারা তাদের নীতিকে বিসর্জন দেননি,গুম-খুনের ভয়ে যারা পালিয়ে বেড়ায়নি, তারাই শুধু এ অগ্রাধিকার পাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

যারা বিগত সমযে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে ইতিমধ্যে বেইমানী করেছেন বিশেষ করে তাদের খালেদা জিয়া নিজেই কালোতালিকার অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।বিএনপি’র চেয়ারপার্সন নিজেই সেই ত্যাগী নেতাদের যোগ্য প্রতিদানে ভূষিত করবেন।

এদিকে সাত বছর শত চেষ্টা করেও যারা সাক্ষাৎ করতে পারেনি অথচ আন্দোলনে ছিলেন গত দুই সপ্তাহে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় চেয়ারপার্সনের সাথে সরাসরি কথা বলার পর নেতাদের মনোবল বেড়েছে, নিজের ত্যাগের মূল্যায়নও পেয়েছে। একই সাথে আত্মগোপনে থাকা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বেঈমান নেতাদের বিষয়ে নানান তথ্য সরবরাহ করেছেন সেই সব মাঠ পর্যায়ের নেতারা।

গৃহবন্দি খালেদা জিয়ার সাথে সরাসরি কথা হয়েছে এমন একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলীয় চেয়ারপার্সন তাদের আন্দোলনের বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলেছেন। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।

দলীয় দ্বন্দ্ব ও কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার চিত্রও জেনে নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে। কে আন্দোলনের মাঠে আছে, কে সরকার দলীয় নেতাদের সাথে সমঝোতা করে চলছে, আগামীর আন্দোলনে কাকে সামনে রাখা ঠিক হবে- এমন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও জেনে নিয়েছেন। একই ধরনের আরেকটি তালিকা এসেছে লন্ডন থেকে।

সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমন এক নেতা আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন গত কয়েকদিন ধরে তৃর্ণমূলের সাথে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এতোদিন নানান বিষয়ে অন্ধকারে রাখলেও এখন চেয়ারপার্সন নিজেই অবগত হয়েছেন।

তার বাস্তব চিত্র সামনে রেখেই পরবর্তী আন্দোলন, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নসহ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে করে মাঠের লড়াকু নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

গত ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই দফতর থেকে সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের একটি তালিকা নেন খালেদা জিয়া। ২৫ ডিসেম্বর নিজ বাসায় গৃহবন্দি হবার আগে-পরে দেশের ৭৫ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন তিনি।

সংসদীয় ৩০০ আসনে কোন নেতা কি ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন তার একটি তালিকাও করেছেন তিনি। এতে সহযোগিতা করেছেন লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার গঠন করা কয়েকটি টিম গত কয়েক মাস ধরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য বর্তমানে রাজপথে থাকা নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

২০০৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সেনানিবাসের বাসায় থাকেন বেগম খালেদা জিয়া। পরের বছরই সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন। এ সময়ের মধ্যে চেয়ারপার্সনের সাথে দেখা করতে পারেনি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

বন্দি এবং মুক্ত হওয়ার পর গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয় নেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সময় থেকেই খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে মাশুল নিয়ে নিজ দলের চেয়ারপার্সনের সাথে সাক্ষাৎ করাতেন বলয়ের সদস্যরা।

নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গেলো কিন্তু আজ পর্যন্ত উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের অনেক নেতা এমনকি কয়েকজন সাবেক এমপিও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি।

লালমনির হাটের (আসন-২) সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল, পাবনার (আসন-২) সাবেক এমপি এ.কে.এম. সেলিম রেজা হাবীব দলীয় চেয়ারপার্সনের দেয়া মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন কিন্তু গুলশানের ওই বলয়টির কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এরকম শত শত নেতা রয়েছেন, যারা কমিটিতে ছিলেন এবং এখনো আছেন অথচ তারা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই দুই এমপির একজন সাক্ষাৎ না পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গুলশানে আসলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন চেয়ারপার্সন সাক্ষাতের সময় দিচ্ছেন না, আবার চেয়ারপার্সনকে বলেছেন তারা গুলশানেই আসেন না। তবে সুবিধার বিনিময়ে অনেকেইে সাক্ষাৎ করেছেন।