ঢাকা: সুখী পরিবারের গোপন সূত্র! সবাই সুখী হতে চায়। তবে আপনি জানেন কি, যারা নিজের প্রতিবেশীর বিষয়ে সন্তুষ্ট তারা নিজের পরিবার সম্পর্কে ২৫ ভাগ বেশি সন্তুষ্ট। মানুষের পারিবারিক সুখ ও শান্তির মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষকরা বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন। পরিবারের ছোট ছোট নানা বিষয়ের মাঝেই আছে সুখী পরিবারের গোপন সূত্র।

বিজনেস ইনসাইডারে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গবেষণা থেকে নেওয়া পয়েন্টগুলো আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য নিজের পরিবারেও ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে।

১. সহজ যোগাযোগ আবশ্যক

বড়দের সঙ্গে ছোটদের যোগাযোগ যত কম হবে, পরিবারের শিশুদের মধ্যে বিভ্রান্তি তত বেশি হবে। এ ধরনের পরিবারের শিশুরা নিরাপত্তার অভাববোধেও বেশি ভোগে। এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, পরিবারের বড়-ছোট যোগাযোগ বাড়লে দ্বিগুণ উপকার পাওয়া যায়।

২. পরিবারের গল্প বলুন

যেসব পরিবারের পিতা-মাতারা পরিবারের ইতিহাস বাচ্চাদের শোনান, তাদের পরিবারের শিশুরা পরিবারের বিষয়ে অনেক আগ্রহ আর গুরুত্ব দেয়। এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে এসব পরিবারের শিশুরা শতকরা পাঁচ ভাগ পর্যন্ত বেশি সুখী।
যেসব পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি বেশি সৎ ও শিশুদের সঙ্গে তাদের অনুভূতি বিনিময় করেন তারা বেশি সংযুক্ত থাকেন। এর মাধ্যমে শিশুদের ১৭ ভাগ পর্যন্ত ইতিবাচক আত্মসচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।

৩. বক্তব্য নয়: তাদের মূল্য দিন, কাছে যান

পরিবারের সদস্যদের কাছাকাছি যাওয়া ও তাদের জন্য সময় ব্যয় করা এক ধরনের মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে সহায়ক। এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, এ দুটি বিষয় মেনে চললে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ এক হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বাড়ে।

৪. আপনি চান বা না চান, শিশুর রোল মডেল আপনিই

তরুণদের মধ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের ক্যারিয়ার ও সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় তারা পিতা-মাতার সঙ্গেই তাদের তুলনা করেন। প্রতি ১০ জন তরুণের মধ্যে সাতজন এ কাজ করেন নিয়মিত।

৫. পরিবার নিয়ে সুখী ও পরিবর্তনের ব্যাপারে উন্মুক্ত হোন

সুখী মানুষদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবার ও কাজ উভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ব্যাপারে উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির মানুষরা ২৩ ভাগ বেশি সুখী। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবর্তনের ব্যাপারে যারা কঠোর বা সহজে কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করে না, তারা পরিবারের সঙ্গে ২৭ ভাগ কম একাত্ম হয়।

৬. যারা ভালোবাসা প্রকাশ করে তাদের সবাই ভালোবাসে

পরিবারের যেসব সদস্য নিজের অনুভূতি বেশি প্রকাশ করে, তারা পরিবারের কম অনুভূতি প্রকাশকারীদের চেয়ে ৪৭ ভাগ বেশি কাছাকাছি অনুভব করে।

৭. কঠিন সময়ে প্রয়োজন ইতিবাচকতা

যখন পরিবারে কঠিন সময় আসে, তখন যদি কেউ ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করে তাহলে পরিবারের সদস্যদের ৬০ ভাগ পর্যন্ত চাপ কমানোর ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়।

৮. ইতিহাস থেকে ক্ষমা শিক্ষা

যেসব পরিবারে পিতা-মাতার নেতিবাচক আচরণের ইতিহাস আছে, তাদের সন্তানদের ৮০ শতাংশই তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর মধ্যে আছে ব্যক্তিগত আচরণের কারণে ক্ষমা করার অভ্যাস।

৯. উচিত অনুচিত নয়, প্রয়োজন ‘পক্ষপাতহীনতা’

কোনো বিষয়ে যখন মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন উচিত-অনুচিতের বিষয়ের চেয়ে ‘পক্ষপাতহীনতা’ আটগুণ বেশি গুরুত্ব বহন করে। এতে পরিবারে আপনার সঠিক অবস্থানের পাশাপাশি সব সদস্যদের সম্মান করা হবে।

১০. সঠিক ভারসাম্য প্রয়োজন

যেসব পরিবারের পিতা-মাতা বাইরের কাজ ও পরিবারের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখেন, তারা তাদের পরিস্থিতিতে ৪১ ভাগ বেশি সন্তুষ্ট থাকেন।
১১. কঠিন বিষয়? আলোচনাতেই সমাধান
যেসব মা তাদের টিনএজার মেয়ের সঙ্গে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, তারা এসব বিষয় অনেক সহজভাবে সামলাতে পারে। এতে ভবিষ্যতে তাদের সম্পর্ক ৩৬ ভাগ কাছাকাছি হয়।

১২. জীবনের ভালো দিক সম্পর্কে চিন্তা

যেসব মানুষ তাদের জীবন ও পরিবার সম্পর্কে সুখী তারা এ বিষয়ে অসুখীদের তুলনায় তাদের জীবনের ভালো দিক সম্পর্কে দ্বিগুণ চিন্তা করেন।

১৩. পরিবারের আচার-অনুষ্ঠান

পরিবারে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হলে পরিবারের সামঞ্চস্যতা বিষয়ে শিশুদের ১৭ ভাগ বেশি অনুভূতি তৈরি হয়।

১৪. পাঠ্য বহির্ভূত বিষয়

যেসব শিশু তাদের নিজেদের আগ্রহে পাঠ্যবহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ে অংশ নেয়, তারা অন্যদের তুলনায় স্কুলে যেতে ২৪ ভাগ বেশি আগ্রহ বোধ করে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ক্লাব ও খেলাধুলার মতো কাজ।

১৫. পৃথক করুন কাজ ও পারিবারিক জীবন

যেসব মানুষ তাদের বাইরের কাজের চিন্তা পরিবারে নিয়ে আসে, কিংবা যারা পরিবারের চিন্তা সহজে কাজে নিয়ে যায়, তারা জীবনের বিষয়ে ৩২ ভাগ কম সন্তুষ্ট থাকে। যারা কাজ ও পরিবারকে আলাদা রাখেন, তাদের তুলনায় এ ধরনের মানুষ ৪৪ ভাগ বেশি নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো পরিস্থিতিতে ভোগেন।

১৬. শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক

যারা শ্বশুরবাড়ির বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, তাদের বিবাহিত জীবনে ১৩ ভাগ বেশি সুখী দেখা যায়।

১৭. পোষা জীবজন্তু

পরিবার যখন কোনো বিপদে থাকে তখন কুকুরের মতো পোশা জিবজন্তু কাজে আসে। বিরুপ পরিস্থিতিতে যেসব পরিবারে পোষা জীব আছে তারা ২২ ভাগ পর্যন্ত বেশি আশাবাদী থাকেন।

১৮. পিতা-মাতা ছাড়াও শিশুদের প্রয়োজন বিশ্বাসী মানুষ

পিতা-মাতা ছাড়াও যেসব শিশুদের পরিবারে বিশ্বাসী বড় কেউ থাকে তাদের জীবনে পরিপূর্ণতার অনুভূতি ও সন্তুষ্টি অন্যদের তুলনায় ৩০ ভাগের বেশি হয়।

১৯. সবাই সুখী পরিবার গঠন করতে পারে

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেক মানুষের পক্ষেই সুখী পরিবার গঠন করা সম্ভব। এ গবেষণায় দত্তক নেওয়া শিশুসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার শিশুদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এতে দেখা গেছে, সুখী পরিবার গঠন ও পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সবাই একইভাবে সক্ষম।