জীবননগরে বোরো রোপণমারুফ মালেক,জীবননগর:চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার চাষীরা তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে আগাম জাতের বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন।

বৈরী আবহাওয়া থেকে রক্ষা পেতে এবং বেশী ফলনের আশায় চাষীরা তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুতের সাথে সাথে ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ হওয়ার ধারণা করা হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়,দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শষ্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত।

এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে।

চলতি মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ছয় হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫২০ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তত করা হয়েছে।  উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান,বীজতলা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশী জমিতে বোরো আবাদের সম্ভবনা রয়েছে। উপজেলার কৃষকেরা ইতিমধ্যেই মৌসুমের শুরুতেই তীব্র শীত উপেক্ষা করে আগাম জাতের ধান রোপণে হয়ে পড়েছে।

এলাকার কৃষকেরা বিআর২৮,বাবু-২৮ ও মিনিকেটসহ বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষে বেশী আগ্রহী। চাষীরা মুলত: পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই আগাম জাতের ধান রোপণ শুরু করেন।

কৃষকদের অভিযোগ চলতি মৌসুমে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সার সংগ্রহ করতে হিমশিম খেলেও চাহিদা মতো সার ছাড়াই অনেকে কৃষক জমিতে ধান রোপণ শুরু করেছেন। এদিকে সপ্তাহব্যাপী তীব্র শীতের কারণে রোপণকৃত ধান নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে চাষীরা।

উপজেলার কালা গ্রামের ধান চাষী খাজা আহমেদ ও ধোপাখালী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন মোফা জানান,আগাম জাতের ধান রোপণ করার জন্যই আমন ধান কাটার সাথে সাথে জমি প্রস্তুত করে আগাম জাতের বীজতলা করা হয়। এ অবস্থায় বীজতলার বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করেই ধান লাগানো শুরু হয়েছে।

উপজেলার পৌর এলাকার গোপালনগরের ধান চাষী আব্দুল হালিম জানান,রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চাহিদা মত সার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে বাড়তি মুল্য দিয়ে সার কিনে আগাম জাতের ধান রোপণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাষের শুরুতেই জমিতে সার দিয়ে চাষ করার উত্তম পন্থা হলেও সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে অনেক চাষী সার ছাড়াই জমিতে ধান রোপণ করছেন। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুন্সী আব্দুস সালেক জানান,উপজেলায় সারের কোন সংকট নেই। এ উপজেলায় এখনও পর্যন্ত পুরোমাত্রায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়নি।

কৃষকদের মধ্যে জমি প্রস্ততের কাজ চলছে জোরে সোরে। তবে কিছু কৃষক বাড়তি লাভের আশায় আগাম জাতের ধান রোপণ শুরু করে দিয়েছেন। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা জানান,আগাম জাতের বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে উপজেলায় পুরোমাত্রায় ধান রোপন শুরু হয়ে যাবে। কৃষকদের সব ধরণের সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদানে উপ-সহকারী কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান,চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে। কৃষকেরা আগাম জাতের সরিষা কেটে ঘরের তোলার পর পরই সে জমিতে নাবি জাতের ধান রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষকদের নাবি জাতের ধান রোপণের ব্যাপারে করণীয় প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে।