আওয়ামী লীগমান্না আতোয়ার, ঢাকা: আ’লীগ ইতিমধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা ছিল আ’লীগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আ’লীগের কঠোর অবস্থানের কাছে বিদেশীদের চাপও নির্বাচনকে রুখতে পারেনি।

এমনকি সাবেক প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন বয়কটসহ সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আ’লীগকে নির্বাচন করা থেকে পিছু হটাতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতেও তৎপর রয়েছে আ’লীগ। তাই আ’লীগ দলকে ঢেলে সাজানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে।

দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, আ’লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সারা দেশে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলে বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা আন্দোলন জমাতে পারবে না। এজন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা হতাশা দূর করে তাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে বলেছেন আ’লীগ দশম জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় এসেছে বলে অহংকারের কিছু নেই।এতে নিজেদের গর্বিত হওয়ারও কিছু নেই। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আমরা জণগনের প্রতিনিধি।

তাই দেশে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড মেনে নেয়া হবে না। আমাদেরকে এখন মনোযী হতে হবে কিভাবে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা যায়।তাদের মনোবল ও দলের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আ’লীগ মারখাওয়া তৃণমূলকে চাঁঙ্গা করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানা গেছে।এরই অংশ সিহাবে আজ কালের মধ্যেই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা সাংগঠনিক দূর্বলতা কাটাতে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।

সূত্রমতে, চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই দেশের ৫৯টি জেলা এবং এর অধীভুক্ত উপজেলার কাউন্সিল শেষ করবে আ’লীগ। এজন্য আগামী সপ্তাহের শুরুতেই দেশের প্রত্যেকটি জেলাতে কেন্দ্রের নির্দেশনা পাঠানো হবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কাজের গতি ফেরাতে বেশ ঘটা করে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

কাউন্সিল অনুষ্ঠানে আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সাতটি বিশেষ কমিটি করা হচ্ছে। ওই কমিটি সাত বিভাগে খোঁজখবর রাখবেন। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায়ই সবকিছু হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে আগামী মাসেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আরেক দফা জেলা সফর এবং জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এই সব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানাবেন। সহিসংতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আ’লীগ।

চলতি মাসেই বিএনপি-জামায়াতের সরকার বিরোধী অপপ্রচারের কাউন্টার এবং সরকারের সফলতা তুলে ধরা হবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

তবে সাংগঠনিক বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। দলের তৃণমুল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংগঠনকে গতিশীল, দলীয় এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দুরত্ব কমিয়ে আনা এবং সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনতে এই সফর কর্মসূচি নিচ্ছে দলের উচ্চমহল।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও বিএনপি-জামায়াত আ’লীগ সমর্থক নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে ও কুপিয়ে আ’লীগের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে। এনিয়ে একপ্রকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল আ’লীগ। এজন্য এখন অনেক জায়গায় তারা মাঠে নামতেই ভয় পাচ্ছে।

তবে সরকারবিরোধীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতাসীন আ’লীগ। দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা ভয় ও আতঙ্ক দূর করতে সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী ও আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বাড়িবাড়ি যাবেন।

সেখানে গিয়ে তারা সরেজমিন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে একটি প্রতিবেদন দিবেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেবে সরকার। এমনিক এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করে ওইসব কর্মীদের মনোবল শক্ত করা হবে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন পরবর্তী যে কয়েকটি কাজে প্রাধান্য দেয়া হবে তার মধ্যে দলের তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা ।কেননা দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা থাকলে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করা এবং আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা যাবে না।