স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: মোটা চালের দাম চড়ায় নাভিশ্বাস বাড়ছে প্রান্তিক ও নিম্নবিত্তের। এক দশকের ব্যবধানে এ চালের দাম এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে; বেড়েছে ১৩১ শতাংশ। এ অবস্থায় সরকারের খোলাবাজার বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমের ওপর ভরসা করছে এ শ্রেণীর ভোক্তা।

তবে সরকারের কাছে চাল মজুদ যথেষ্ট থাকলেও বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে তা পৌঁছানো যাচ্ছে না বেশির ভাগ ভোক্তার কাছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে মোটা চালের দাম ছিল ১৫ টাকা ৬১ পয়সা। পরের কয়েক বছর দাম বাড়ার হার স্বাভাবিকই ছিল।

২০০৭-০৮ অর্থবছর এ চালের দাম দাঁড়ায় ১৯ টাকা ৮৭ পয়সায়। কিন্তু পরের অর্থবছরই এক লাফে প্রায় ৯ টাকা বেড়ে এ চালের দাম ঠেকে ২৮ টাকা ৪৪ পয়সায়।

এরপর আবার এক বছর দর স্বাভাবিক থাকার পর ২০১০-১১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ টাকা ৯৩ পয়সা, যা ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পরের দুই অর্থবছর অবশ্য পড়তির দিকে ছিল দাম; কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৩ টাকা ২০ পয়সা ও ৩০ টাকায়। তবে চলতি অর্থবছর এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকায়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও মোটা চালের দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, শনিবারও প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৬ টাকায়, এক মাস আগে যা ছিল ৩৩-৩৫ টাকা। আর গত বছরের এ সময়ে দেশের বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা।

টিসিবির হিসাবেই এক বছরের ব্যবধানে এ চালের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে টিসিবির তথ্যে প্রতি কেজি চালের দাম ৩৬ টাকা বলা হলেও খোলাবাজারে তা আরো ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বাড়াকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

আবার ভরা মৌসুমে দাম বাড়ার পেছনে মিল মালিকদের দায়ী করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। আর মিল মালিকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ তো বেড়েছেই। সেই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় সরকারের নজরদারির অভাব ও উদাসীনতাই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মোটা চালের দাম বেশি বাড়লে অবশ্যই সাধারণ ভোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর দাম বাড়ার সুফল নেবেন মধ্যস্বত্বভোগী কিছু ব্যবসায়ী। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দামে ভারসাম্য আনতে হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ভোক্তা যেন কম দামে চাল পেতে পারে, আবার কৃষকও তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সে ব্যবস্থা করা জরুরি। এজন্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মিল মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেশি। বাজারে মোটা স্বর্ণা ধানের মণপ্রতি দাম ৮৩০-৮৪০ টাকা, গত বছরের চেয়ে যা ১০০ টাকা বেশি। আবার জ্বালানি খরচ বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। তবে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বলছে, টানা হরতাল-অবরোধে পাইকারি বাজারে চালের মজুদ কমেছে। তাতে ব্যবসায়িকভাবে মন্দ সময় পার করেছেন দেশের মিলাররা। এ অবস্থায়

বাজার পুনরায় স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে দাম বাড়িয়ে মন্দা পুষিয়ে নিচ্ছেন তারা। এ অভিযোগ অস্বীকার করে কুষ্টিয়ার ভাণ্ডারি রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা জানান, সব মিলেই এখন চালের মজুদ প্রচুর। এ অবস্থায় সরবরাহ বাড়ানোয় মনোযোগ সবার। দাম বাড়িয়ে বিক্রি কমানোর অবস্থা বা সুযোগ তাদের নেই। বর্তমানে দাম যতটুকু বেড়েছে, তা বর্ধিত খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাবুবাজারসহ মোহাম্মদপুর ও বাড্ডার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩৫ টাকায়। গত বছরের এ সময় মোটা চালের পাইকারি দাম ছিল ২৮-২৯ টাকা কেজি।  বাবুবাজারের বিক্রেতা শিল্পী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী কাওসার হোসেন জানান, মোটা গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তা পাইকারি বাজারে ১ হাজার ৭২৫ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহে এ চাল বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়।

ঢাকা শহরের নিম্নবিত্ত শ্রেণীসহ দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ মোটা চালের অন্যতম ক্রেতা। সহনীয় দামে তাদের কাছে চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য অধিদফতরের উদ্যোগে চালু রয়েছে ওএমএস কার্যক্রম। বর্তমানে সীমিত আকারে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় চালু আছে এ কার্যক্রম। বাজারে ওএমএস কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় মোটা চালের দাম বাড়ছে।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আহমেদ হোসেন খান বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে খাদ্য অধিদফতর অবগত। শিগগিরই মোটা চালের বাজার যাচাই করে ওএমএস কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। সুত্র: বনিক