barisal-lansআসাদুজ্জামান মুরাদ , দেশ প্রতিক্ষন, বরিশাল ব্যুরো: বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ির দাসেরহাট এলাকায় লঞ্চডুবিতে ১৩ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২২ জন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙনের কবলে পরে ঐশী-২ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি এ দুর্ঘটনার শিকার হয়।

এ ঘটনায় ৪ নারী, ২ শিশুসহ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ২২ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এস এম আখতারুজ্জামান। নিখোঁজদের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মোতালেব।

তারা হলেন সুজা মোল্লা, মনোয়ারা বেগম, হামিদা বেগম, খুকু মিস্ত্রি, রাবেয়া বেগম, সাখাওয়াত হোসেন, মিলন ঘরামী, নাজাত (৯), সাগর, আ. মজিদ, ফিরোজা বেগম, দিদার, রিয়াদ, রেহানা বেগম, রাফি, মারিয়া আক্তার, হিরা, রামুক, কল্পনা, সুখদেব মল্লিক, জয়নাল ও রুহুল আমিন। এ ছাড়াও উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে বরিশাল থেকে।

ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ও স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শনাক্ত করতে পেরেছে ডুবুরিদল। তবে প্রবল স্রোত থাকায় লঞ্চ উদ্ধারকাজে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জিয়াউল হাসান।

বিকেল ৪টা পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা হলেন উজিরপুরের হারতা গ্রামের সুকদেব মল্লিক (৩০), রাবেয়া বেগম (৫০), মোজাম্মেল মোল্লা (৬০), রুপা বেগম (২৫), সাগর মীর (২৪), জিরাকাঠী গ্রামের মিলন ঘরামী (৩৫), মশাং গ্রামের শান্তা (৮), রহিমা বেগম (৬৫), অজ্ঞাত (৮) এক শিশু, উত্তর সাতবাড়িয়া গ্রামের কোহিনূর বেগমসহ (৪৫) মোট ১৩ জন।

সৈয়দকাঠি উনিয়নের মেম্বর আ. মান্নান বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় বানারীপাড়া ঘাট থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বেলা সোয়া ১১টার দিকে উত্তর দাসেরহাটে ঘাট দিতে গেলে নদীর পাড় ভেঙে লঞ্চটির ওপর পড়লে কাত হয়ে ডুবে যায়। ঘটনার সময় বৃষ্টি থাকায় ছাদে ও ভেতরে থাকা ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাসেরহাট এলাকার সিকদারবাড়ির মো. আসাদ সিকদার বলেন, মাটির বড় চাকা লঞ্চটির ওপর পড়ায় ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে কাত হয়ে ডুবে যায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশালের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় বানারীপাড়া বরিশাল মিলিয়ে তারা দুটি দল কাজ করছে। বেলা ৩টার দিকে লঞ্চটি শনাক্ত করতে পেরেছে ডুবুরিরা। তবে স্রোতের কারণে লঞ্চ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।

ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হওয়া যাত্রী সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সন্ধ্যা নদীর বানারীপাড়া লঞ্চঘাট থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন জন যাত্রী নিয়ে ঐশী-২ নামের একতলা লঞ্চটি উজিরপুরের হাবিবপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে দাসেরহাট উত্তরপাড়ে যাত্রী ওঠানোর সময় নদীরপাড়ের বিশাল অংশ ভেঙে লঞ্চের ওপর পরে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। এ সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে এক পাশে এলে লঞ্চটি কাত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়। পরবর্তীতে তারা প্রায় ১৫ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।

নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় অন্যান্য যাত্রীরা ডুবে যাওয়া লঞ্চের সাথে নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটির যাত্রী আলেয়া বেগম বিলাপ করে বলেন, আমি সাঁতরে পারে উঠলেও আমার স্বামী জয়নাল হাওলাদারসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় বৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চের সব জানালা বন্ধ ছিল। ফলে বেশির ভাগ যাত্রী লঞ্চের মধ্যেই আটকা পরে। বানারীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ২৪ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

barishalবানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল উদ্ধারকাজ শুরু করে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির স্থান শনাক্ত করে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর থেকেই নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষ ভিড় করে। নদীতীরে নিখোঁজ স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, প্যানেল স্পিকার অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকার সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।