fine-foodsফয়সাল মেহেদী: শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)  নির্দেশনা তোয়াক্কা করছে না পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের লোকসানি কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেড। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এককভাবে নূন্যতম দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। তবে এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে ফাইন ফুডসের উদ্যোক্তা-পরিচালক মাত্র ১ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে।

এদিকে দীর্ঘ একবছর অভিহিত মূল্যে নিচে লেনদেন হলেও অতি সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে  অভিহিত মূল্যে ফিরেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া স্বল্পমূলধনী ও পুঞ্জিভুত লোকসানি কোম্পানি ফাইন ফুডসের মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৯৩টি শেয়ার রয়েছে।

২০১৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে ছিল। ওই সময় সাধারন বিনিয়োগকারীদের হাতে ৯৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার ছিল।

তবে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ছিল মোট শেয়ারের মাত্র ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। এসময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শূূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে।

শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত সর্বশেষ (২৯ সেপ্টেম্বর’১৬) হালনাগাদ প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯৮ দশমিক ৪৪ শতাংশই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। অথচ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালক আলোচ্য সময় মাত্র ১ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে।

অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, উদ্যোক্তা-পরিচালদেরে এককভাবে নূন্যতম দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ ধারণ করার কথা। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেই নির্দেশনা লঙ্গন করেছে এ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালক। জানা গেছে, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই স্বাধীন পরিচালক।

শেয়ার দর একবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ: ২০১৪ সালের সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসানের কারনে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহে শেয়ারটির দর ধারাবাহিকভাবে কমে ফেস-ভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করে।  পরবর্তী সময়ে ফেস-ভ্যালুর নিচেই শেয়ারটি লেনদেন হয়।

fine-food-1-yearতবে সম্প্রতি শেয়ারটির দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে। মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর ৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে টানা বেড়ে ফেস-ভ্যালুতে উঠে আসে কোম্পানিটির শেয়ার দর। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বা ১.১০ টাকা বেড়েছে। ওই দিন শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১২ টাকা ৯০ পয়সায়।

যা বিগত একবছরের মধ্যে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর। একবছরের মধ্যে শেয়ারটির সর্বনিন্ম দর ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা।  সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১টি শেয়ার ১৫১ বার লেনদেন হয়েছে।

কোম্পানিতে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকি: লোকসানের কারণে কোম্পানিটির প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও নেগেটিভ অবস্থানে রয়েছে। ফলে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের উচ্চ ঝুঁকি বহন করতে হবে। তাছাড়া উচ্চ ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট  কোম্পানির শেয়ারকে নন-মার্জিনেবল হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এর মানে এই কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো মার্জিন ঋণ পাবেন না।

প্রসঙ্গত, শেয়ারের বাজার দরকে তার আয় দিয়ে ভাগ করলে মূল্য-আয় অনুপাত (প্রাইস আর্নিং রেশিও বা পিই রেশিও) পাওয়া যায়। ঝুঁকি নির্ণয়ে দর-আয় অনুপাতই সবচেয়ে কার্যকর মাপকাঠি।

লাভ-লোকসান-: ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জুন ক্লোজিং কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে সমাপ্ত অর্থবছরে কর পরিশোধের পর ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুনাফা করে। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরে যথাক্রমে ৬২ লাখ ও ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা লোকসান করে। আগের বছরগুলোতে কম-বেশী স্টক ডিভিডেন্ড দিলেও গেল দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে ছিল।

পরবর্তীতে কোনো ডিভিডেন্ড না দেয়ায় কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়। এদিকে চলতি বছরের সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই’১৫-মার্চ’১৬) নয় মাসের হিসাবে ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা লোকসান করেছে এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ১৩ পয়সা। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদ র্মল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৬৬ পয়সা। যা ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ৯ টাকা ৭৪ পয়সা।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করে কোম্পানিটি প্রায় ৯৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু লোকসান দেখিয়ে দুই বছর ধরে কোনো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। চলতি বছরের প্রান্তিকগুলোতেও লোকসানে রয়েছে।

কোম্পানিটি যে ভাবে তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে শিগিরই অস্তিত্ব হারাবে। এতে পথে বসবে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত দির্শেদনা অমান্য করে কেন কোম্পানিটি তাদের সব শেয়ার বিক্রি করছে অতি দ্রুত তা খতিয়ে দেখা।