৫০০ কোটি টাকা লেনদেন ডিএসই (DSE)-তেফয়সাল মেহেদী : চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধের অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জুন ক্লোজিং হওয়া কোম্পানিগুলো। ইতোমধ্যে বেশকিছু কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অর্ধ্ব-বার্ষিক) প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রকাশের জন্য পর্ষদ (বোর্ড) সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। বাকী কোম্পানিগুলো ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে প্রন্তিক প্রতিবেদন প্রকাশকে ঘিরে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে, বিনিয়োগের জন্য চলছে কোম্পানির অতীত, বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যত সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ। প্রান্তিক প্রতিবেদন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে আরও গতি আসবে বলে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে। পুঁজিপতিরাও নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ছোট ছোট কারেশনের মধ্য দিয়ে অধিকাংশ শেয়ারের দর ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে লেনদেন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর মুনাফা তুলনামুলকভাবে বাড়লে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে এবং বাজারে আরও গতী আসবে। তবে তুলনামুলভাবে যে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমবে সে শেয়ারগুলোর প্রতি আগ্রহ হারাবে বিনিয়োগকারীরা। জুন ক্লোজিং হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যদি অধিকাংশরই মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে তাহলে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, অর্থ আইন’ ২০১৫ অনুসারে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কোম্পানির জন্য কর বছরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে হিসাব বছর গণনা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয় ৩০ জুন। তবে পুঁজিবাজারের ১৩ বহুজাতিক কোম্পানিকে জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতার অব্যাহতি দেয়া হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের ৩০টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টি, বীমা খাতের ৪৭টি এবং ১২টি বহুজাতিক কোম্পানিসহ মোট ১১২ কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। আর অপর একটি বগুজাতিক কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয়েছে মার্চে। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাদে বিভিন্ন খাতের ১৯৪টি কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয় ৩০ জুনে। এরই ধারাবাহিকতায় জুন ক্লোজিং হওয়া কোম্পানিগুলোর চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসের বা দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ঘনিয়ে এসছে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশীদ চৌধুুরি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত দুই ধরনের মুনাফা করেন। এক. ডিভিডেন্ড গেইন, দুই. ক্যাপিটাল গেইন। ধস পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীরাদের একমাত্র ভরসাই ছিলো ডিভিডেন্ড গেইন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির তেমন মিল ছিল না। আর হাতে থাকা শেয়ার দর তলানিতে থাকায় ক্যাপিটাল গেইন করা সম্ভব হয়নি। বরং কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আটকে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর সাম্প্রতিক সময়ে বাজার পরিস্থিতে ভালো হয়েছে। সূচক ও লেনদেনে গতি এসছে।

বিনিয়োগকারীরাও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, আসন্ন দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ শেয়ারের দর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদেরও প্রত্যাশা বাড়ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর মুনাফা ও ইপিএস বাড়লে বাজারে আরো গতি আসবে এবং বিনিয়োগকারীরাও তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে। বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাবসা করার ইচ্ছে যার বিনিয়োগ করার সুযোগ তার’।