full_1521736119_1448170575এইচ কে জনি : একের পর এক রেকর্ড গড়েই চলেছে দেশের পুঁজিবাজার। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সব ইতিহাস। ২০১০ সালের ধস পরবর্তী টানা মন্দায় যেসব বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তারা ভাবতেই পারেন নাই যে এতো স্বল্প সময়ে বাজার ধসের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। সূচক কিংবা লেনদেনে পুঁজিবাজার গত ছয় বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাজার মূলধনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে গত ২০ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এক সময় যে সংখ্যাগুলো ইতিহাস মনে হতো, আজ সেগুলোই বর্তমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন ইতিহাস।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাজার মূলধনে পুঁজিবাজারে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ইতিহাস। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর সর্বোচ্চ বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি তা বেড়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫০২ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর সর্বশেষ আজ তা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫১১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এদিকে গত ২৬ ডিসেম্বর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে মাত্র ২০ কার্যদিবসের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ৩৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এদিকে, লেনদেনে ডিএসই আজ সাড়ে ছয় বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এদিন ডিএসইতে ২ হাজার ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা গত সাড়ে ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন ডিএসইতে দুই হাজার ১২২ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে যে সংস্কার করা হয়েছে এর মাধ্যমে বাজারের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। আর সেটাকে কেন্দ্র করে আগামি দিনগুলোতে বাজারের আরও উন্নয়ন ঘটবে। এছাড়াও সামনে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের ডিভিডেন্ডকে কেন্দ্র করে এসব খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের উৎফুল্ল করে তুলছে। যার প্রভাবে প্রতিদিনই বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। তারা আরও বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে বাজার ভালো অবস্থায় রয়েছে। ক্ষুদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই সূচক ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করবে। পাশাপাশি দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনও হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু লোকসানি ও স্বল্পমূলধনী কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়ায় উৎকন্ঠাও প্রকাশ করেন তারা।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজার সঠিক পথেই রয়েছে। বাজারে তারল্য সংকট কাটছে।

বিনিয়োগকারীদের পদচারণাও বেড়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবেই কাজ করছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের বিপরীতে সুদের হার কম হওয়ায় অনেকে বিকল্প হিসেবেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। ধসের পর শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমেছিল। কম দামে সেই শেয়ার কেনায় অনেকে লাভবান হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে। দৈনিক লেনদেন যথাযথভাবেই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন সচেতনভাবে দেখেশুনেই বিনিয়োগ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।