BANK-LAGOফয়সাল মেহেদী: সুবাতাস বইছে ব্যাংক খাতে। ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ব্যাংকের শেয়ার দর। আর ব্যাংক খাতের উপর ভর করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। পুঁজিবাজারেও চলছে রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের ২৮ ব্যাংকের শেয়ার দর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দর তলানিতে ছিল। এমনকি বেশকিছু ব্যাংকের শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করে। এতে করে এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ৩১ ডিসেম্ভর এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব বছর সম্পন্ন হওয়ায় ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকেও বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের মৌলভিত্তি হিসেবে খ্যাত ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।

এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আর ব্যাংকের আমানতের সুদ হার সর্বনিন্ম পর্যায়ে থাকায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ার দরে। এছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে এ খাতে বিনিয়োগ করা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধা-দন্দ্বে ছিলেন।

ইতোমধ্যে সেই জটিলতারও অবসান হয়েছে।  সার্বিক দিক বিবেচনায় ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়। তাই এ খাতের শেয়ার দর যেভাবে বাড়ছে তা স্বাভাবিক এবং এনিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বর্তমানেও এ খাত বিনিয়োগ অনুকূলে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মশিহর সিকিউরিটিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এ. এল. ভট্টাচার্য্য টুটুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর যে অবস্থানে ছিল তাতে বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। অন্যদিকে বাংকের আমানতের সুদের হারও সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজার ও শেয়ার দরে। এনিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে মোট ৩০টি ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে গতকাল এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে ২৮ ব্যাংকের শেয়ার। সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (৯ মাসের) অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতের ৩০ ব্যাংকের মধ্যে ২০টির শেয়ারপ্রতি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

অন্যদিকে আট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেলেও লোকসান বেড়েছে একটি ব্যাংকের। এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিক শেষে অপর ব্যাংকটি মুনাফা থেকে ব্যাপক লোকসানে নেমেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত এক থেকে দুই বছেরের মধ্যে যে ব্যাংকগুলোর শেয়ার দর সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে তার মধ্যে- এবি ব্যাংক শেয়ার দর গত একবছরে মধ্যে ১৪.৭০ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল ২৬.৭০ টাকায় উঠে আসে। এদিন শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয় ২৫.৫০ টাকা দরে এবং যা সমাপনী দর ছিল ২৫.৪০ টাকা। একইভাবে আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার দর ১২.১০ টাকা থেকে বেড়ে ২০.১০ টাকায় উঠেছে।

সোমবার সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ২০ টাকা দরে এবং সমাপনী দর ছিল ১৯.৯০ টাকা। ব্যাংক এশিয়ার শেয়ার দর ১৩.৪০ টাকা থেকে আজ  ২০.১০ টাকায় উঠেছে। দিনশেষে শেয়ারটি লেনদেন হয় ২০ টাকা দরে এবং সমাপনী দর ছিল ২০ টাকা। গতকাল সিটি ব্যাংকের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩৫.৯০ টাকা দরে এবং সমাপনী দর ছিল ৩৫.৬০ টাকা। অবশ্য এদিন শেয়ারটির দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে, আর্থাৎ আগের কার্যদিবসে শেয়ারটি সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ২২.৪০ টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১৯.৪০ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৩৪.৫০ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ১৫.৩০ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ১৬.০০ টাকা, আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের ৫.৫০ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ২৬.৪০ টাকা, ইসলামি ব্যাংকের ৪২.৭০ টাকা,

যমুনা ব্যাংকের ২০.২০ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১৯.৫০ টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩০.০০ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫.৭০ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ১৫.৮০ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ২১.২০ টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৩.৯০ টাকা, প্রাইম ব্যাংকের ২১.৩০ টাকা, পূবালী ব্যাংকের ২৭.৩০ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১৭.২০ টাকা, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের  ১৯.৭০ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ২১.৫০ টাকা, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪.৯০ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৬.৭০ টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ২৫.১০ এবং উত্তরা ব্যাংকের ২৮.৪০ টাকা দরে শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ সবগুলো কোম্পানিরই শেয়ারপ্রতি দর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আবু আহম্মদ বলেন, ধস পরবর্তী সময়ে সূচক ও লেনদেনের টানা পতন অব্যাহত থাকায় বাজারের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারই অবমূল্যায়িত্ব অবস্থায় ছিল। আর ব্যাংক খাতের শেয়ার দর এমন পর্যায়ে ছিল, যা নতুন করে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক সময়ে লেনদেনের টানা উত্থানে গতি ফিরেছে শেয়ার দরে।

এছাড়া সমাপ্ত বছরে অধিকাংশর ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে পুঁঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের নিরীক্ষিত হিসাবে মুনাফা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমাপ্ত বছরের জন্য ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ডের হার বাড়তে পারে এমন প্রত্যাশায় ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। দর বাড়ার এ প্রবণতা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।