Rice_1_0দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : আমনের ভরা মৌসুমে প্রতিদিনই বাজারে আসছে নতুন ধান-চাল। এরই মাঝে হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। ২ মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে চাল ভেদে বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর আমনের ভরা মৌসুমে দাম বাড়ার কারণে হিসেবে পাইদের মজুদকরণকেই দায়ী করছেন অনেকেই।

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারির কাছ থেকে বেশি দামে কেনার কারণে খুচরা বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশি চালের প্রধান উৎস উত্তরবঙ্গের মিল মালিক এবং সেখানকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।

পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সূত্রকে দায়ী করে পার পেলেও চালের দাম বাড়ার জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা।

গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জ বাজার এলাকা সরোজমিনে দেখা গেছে, ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা জিরা সিদ্ধা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়; যা গত নভেম্বরে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে এ চালের দাম ৪০০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পাইজাম সিদ্ধ ২৫০ টাকা বেড়ে ১৮০০ থেকে ১৮৫০ টাকা; স্বর্ণা ১৫০ টাকা বেড়ে ১৭৫০ টাকা; সিদ্ধ মোটা চাল ১০০ টাকা বেড়ে ১৬৫০ টাকা; মিনিকেট আতপ ৩০০ টাকা বেড়ে ২২০০ টাকা এবং বেতি চাল ৩৫০ টাকা বেড়ে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাটারিভোগ মান ভেদে ২৪০০ থেকে ২৯০০ টাকা; চিনিগুড়া আতপ চাল ৪৬০০ থেকে ৪৯০০ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল ১৮০০ থেকে ২৪২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৫ টাকা করে বেশি রাখা হচ্ছে। খুচরা বাজারে মিনিকেট ২৮ নম্বর চাল ১৯৫০ টাকা; মিনিকেট ২৯ নম্বর চাল ১৬৬০ টাকা; কাটারি পাইজাম চাল ২৩৫০ টাকা এবং বালাম সিদ্ধ চাল ১৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাহাড়তলী বাজারের চাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, উত্তরবঙ্গের চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম বাড়াচ্ছে। আর পাইকারি বাজার থেকে চাল কেনার পর পরিবহন ব্যয়ের খরচও আমাদের দিতে হয়। ফলে আগের দামের চেয়ে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে সব ধরনের চাল। তবে এখন বাজারে চালের কোনো কৃত্রিম সংকট নেই।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের শেষ দিকে চালের বাজার অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু নতুন বছরে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। আমন ধান পুরোদমে বাজারে আসলে সব ধরনের চালের দাম আবারও কমে যাবে।

আগ্রাবাদের গোসাইলডাঙ্গার খুচরা চাল ব্যবসায়ী তিলক দত্ত জানান, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। তবু আমাদের বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। কারসাজির মাধ্যমেই প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস.এম. নাজের হোসাইন অর্থসূচককে জানান, চালের বাজারে কোনো সংকট না থাকলেও নিয়মিত দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়াতে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে উৎপাদিত চালেই দেশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এ সময় চালের দাম বাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত মনিটরিং হলে চালসহ সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ক্যাবের জরিপের বরাত দিয়ে এস.এম. নাজের হোসাইন জানান, চট্টগ্রামে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পাইজাম সিদ্ধ চালের প্রতি বস্তা ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর বেতি আতপ চাল ১৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস.এম. নিজাম উদ্দিন বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। আগস্ট মাসে খাদ্য বিভাগের ধান চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরুর পর মোটা ও সিদ্ধ চালের দাম অনেক বেশি বাড়ে। ওই সময় আতপ চিকন ও মোটা চালের সঙ্গে সিদ্ধ চালের দামও বেড়েছিল। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বাড়ছে।

এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উত্তরবঙ্গের চাল ব্যবসায়ীদের সব সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। বর্তমানে তারাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে বাজার মনিটরিং শুরু হলে চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।