rijvivai_ruhul_kabi-bg201601281401580020160330053300দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : কানাডার আদালতের একটি রায়ের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে সরকারের ‘চক্রান্তমূলক নাটক’-এর অংশ বলে দাবি করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য বলেন।

উল্লেখ্য, কানাডার ফেডারেল আদালত হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কারণে দলটির এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দেয়। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে কানাডার আদালত বলেছে, বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারে-এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় দুই দলের বৈরিতার ইতিহাস, হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা, সরকারের লক্ষ্য অর্জন কঠিন করে তুলতে অর্থনৈতিক ক্ষতির কৌশল হিসেবে হরতালের ব্যবহার এবং তাতে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন ও ইন্টারনেটের উন্মুক্ত তথ্য তুলে ধরে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কানাডার ফেডারেল আদালত।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপির ডাকে টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে ব্যাপক সহিংতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্য হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘কানাডার যে অনলাইনে রায়টি বেরিয়েছে, সেটি করেছে (সাগর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা। গত মাসের ২৫ তারিখে রায় বেরিয়েছে। প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেল। হঠাৎ করে কালকে আমরা এর প্রচার দেখতে পেলাম, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের প্রচারিত মিডিয়ায় এটা প্রচার করতে ধুম পড়ে গেছে। কানাডায় বসে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নানা ধরনের চক্রান্তের বেড়াজাল তৈরি করছেন, একটা বর্বরতম পরিকল্পনা তৈরি করছেন-এটা সুস্পষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘রায় পড়ে যতটুকু বুঝেছি- এটা সম্পূর্ণ চক্রান্তমূলক নাটকের অংশ। আমরা মনে করি, এটি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি বিষয়। বিষয়টিকে তারা একটি নাটক সাজিয়েছে এবং ওই নাটকটা ওইভাবে তারা তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে। বানোয়াট একটা নাটক তারা তৈরি করেছে, নির্বাচনের আগে এ ধরনের কিছু ঘটনা সৃষ্টি করবেন, সৃষ্টি করে জনগণের মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করবেন-এটা তাদের উদ্দেশ্য।’

এ রায়ের বিরুদ্ধে কানাডায় উচ্চ আদালতে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ‘সেটা আমরা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে বলতে পারব। এখন যেটা তাৎক্ষণিক জেনেছি, তার প্রতিক্রিয়া জানালাম।’

রায়ের একটি অংশের বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিরোধী দলের একজন ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কথা বলা হচ্ছে, সে তার আবেদনে কী বিএনপির বিরুদ্ধে বলবে? সে তো বলবে আমি বাংলাদেশে একটা প্রতিকূলতার মধ্যে আছি, হয়রানি হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, টর্চার হতে পারে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে পারে-এসব কথা আবেদনে বলবে। সে ওই কথা (বিএনপির বিরুদ্ধে) বলবে কেন?’

তিনি বলেন, ‘এই কথাতেই মনে হচ্ছে এটা একটা সাজানো নাটকের বিষয়। যেটা কানাডায় উপস্থাপন করেছেন, ইমিগ্রেশন বিভাগকে এভাবে ভুল তথ্য তারা দিয়েছেন, বানানো নাটকের ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং সেটা তারা কোর্টে নিয়ে গেছেন।’

যে ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবে, সে ব্যক্তি কী বলবে- বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন? এই প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘রায়ে বিচারক বলেন আবেদনকারীর বক্তব্যকে আমলে নিয়ে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে সহিংস ঘটনা হিসেবে অবহিত করেন। বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়ে জনগণ ও সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘এই যে ইমিগ্রেশন কমর্কতার তথ্যের ভিত্তিতে অর্থাৎ এটা বিএনপি সন্ত্রাসী কি না, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, এটার জন্য প্রসিকিউশনের বিপক্ষে যে ডিফেন্স ল’ ইয়ারের কোনো যুক্তি-তর্ক এখানে দেখছি না। আমরা রায়ের সূচনা যতটুকু পড়েছি, আরো বিস্তারিত জেনে পরে বলব।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কানাডার রায় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘কানাডার যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানকার যারা প্রসিকিউশন করেন, তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে। সুতরাং শুধু শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করার মানে হয় না-এটাকে বিশ্বাস করলে, এটিও বিশ্বাস করতে হবে আওয়ামী লীগও সস্ত্রাসীদের দল।’

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, কেউ যদি বিশ্বাস করে যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন, তাহলে আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়ে আছে, আমাদের আগে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুল আউয়াল খান, মুনির হোসেন প্রমুখ।