tibদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : ভিসা প্রক্রিয়ার আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে গত এক বছরে দেশ থেকে সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশগামী একজন পুরুষ ৯০ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভিসা অনুমোদন, বড় ব্যবসায়ীর ভিসা ক্রয়, গন্তব্য দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়ন, অভিবাসীকর্মীর কাছে দালালদের ভিসা বিক্রি, তৃণমূলে দালালদের দায়িত্বসহ বেশ কয়েকটি স্তরে এই দুর্নীতি হয়ে থাকে।

দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শ্রম অভিবাসন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় প্রধান উৎস। বাংলাদেশ থেকে একজন পুরুষ অভিবাসনপ্রত্যাশী ৯০ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এ দুর্নীতিকে উৎসাহিত না করলেও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) মনজুর -ই- খোদা ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।

এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৭.৮৩ শতাংশ। এ সময়ে প্রবাসীদের থেকে আয় ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকায়।

সৌদি আরবে ২০১৬ সালে ৬৮ হাজার ৬৪ জন কর্মী গমনের মাধ্যমে ৮১৭ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ভিসায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও নেওয়া হয়েছে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা। একইভাবে বাহরাইনে ৬৪ হাজার ৮৭৯ জন কর্মী গমনে ৪৫৪ কোটি, ওমানে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮১৫ জনে ১ হাজার ১০৫ কোটি, কাতারে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০১ জনে ১ হাজার ২৪২ কোটি, আরব আমিরাতে ২ হাজার ৬৮২ জনে ২৭ কোটি, মালয়েশিয়ায় ৩৬ হাজার ৮৭ জনে ৩৬১ কোটি ও সিঙ্গাপুরে ৪৯ হাজার ১৬৩ জনে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকাসহ মোট ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

“অভিবাসীদের কাছ থেকে ভিসার অতিরিক্ত মূল্য নেয়া হয় দাবি করে গবেষণায় বলা হয়, সৌদি আরবে কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত খরচ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অথচ একজন অভিবাসী কর্মীকে ব্যয় করতে হয় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান, বিদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি, বৃহৎ ভিসা ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ভিসা ব্যবসায়ী, বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি, বিভাগীয় ও তৃণমূল দালাল- এ সাতটি পর্যায়ে দুর্নীতির কারণে ভিসার এ দাম হয়।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা মধ্যপাচ্যের অন্যান্য দেশে যেতেও কমপক্ষে আড়াই লাখ থেকে সর্বোচ্চ আট লাখ টাকা খরচ হয়। বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশি অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অদক্ষ ও চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত শ্রমিক গিয়ে বেকার হয়।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ভিসা প্রতি ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার, বিএমইটি বর্হিগমন ছাড়পত্রের অনুমোদনে ১০০ থেকে ২০০, পুলিশ ছাড়পত্র ৫০০ থেকে ১ হাজার ও বিএমইটি দেশভিত্তিক ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ম বর্হিভূত আদায়ের মাধ্যমে দুর্নীতি করে বলে গবেষণায় উঠে আছে।

‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন, ২০১৩’ কার্যকর, বিএমইটির ওয়ান স্টপ সেবা কার্যকর, তদারকি, দালালদের জবাবদিহিতায় আনা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এসব দুর্নীতি বন্ধে গবেষণায় সুপারিশ করা হয়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে এ খাত দালাল নির্ভর খাত হয়ে গেছে। দালালদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শ্রম অভিবাসন বিষয়ক সব আইন বাস্তবায়নে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। আইনের দুর্বলতার ঘাটতি মেটাতে হবে। শুধু দেশে নয় গন্তব্য দেশেও দুর্নীতি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তা সমাধান করতে হবে।