tribunalনিজস্ব প্রতিবেদক : প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জ গঠন পরবর্তী শুনানি আগামীকাল পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হবে। আর পূর্ব নির্ধারিত এদিন এ মামলার বাদী ও এক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়। চার্জ গঠন শেষে ওই দিন এ মামলার তিন ব্যক্তি আসামির (মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই এবং পরিচালক সালমা আক্তার) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। একই সঙ্গে মামলার বাদী বিএসইসি’র উপ-পরিচালক এ এস এম মাহমুদুল হাসান ও সাক্ষীদের মধ্যে তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার উল কবির ভূঁইয়াকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন বিচারক আকবর আলী শেখ। ওই দিন এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয় ৯ এপ্রিল।

জানতে চাইলে বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, ইতোমধ্যে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে। এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পাশাপাশি বাদীসহ সাক্ষীদের মধ্যে এক জনকে ৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটিসহ চার জনকে আসামি করে ২০০০ সালে ১১ এপ্রিল মামলা করা হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন মামলা দায়ের করেন। সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে যার মামলা নং ১৩৬৪/২০০০।

এদিকে গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হওয়ায় মামলাটির নতুন নম্বর দেয়ার হয়েছে ০৩/২০১৬। তবে মামলাটির পূর্বের বাদী কমিশনের তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন চাকরি থেকে ইস্তেফা দেওয়ার তার পরিবর্তে নতুন করে উপ-পরিচালক (আইন) এ এস এম মাহমুদুল হাসানকে ২৮ নভেম্বর বাদী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

মামলার নথী সূত্রে জানা গেছে, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কোম্পানির নামে আসামিরা অক্টোবর ১৯৯৬ এ প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে কোম্পানির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০০% প্রিমিয়ামে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করে। প্রসপেক্টাসে আইপিও ফান্ড এর ব্যাবহার সম্পর্কে যে অঙ্গীকার করেছে, তাও পালন করেননি। অস্তিত্বহীন প্ল্যান্ট এবং মেশিনারিজকে কোম্পানির সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছে এবং মালিকানাধীন প্ল্যান্ট ও মেশিনারিজের অধিক মূল্য দেখিয়েছে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ যে শর্তাধীনে ১০০% প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রিতে সম্মতি দেয়, তাও তারা ভঙ্গ করেছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন অক্টোবর ১৯৯৯ এ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২১ ধারার ক্ষমতাবলে উপরোক্ত অভিযোগসমূহ তদন্ত করার জন্য একটি ইনকোয়ারী কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে, ইনকোয়ারি কমিটির পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বুয়েট কনসালটেন্টের মাধ্যমে ইনকোয়ারি কমিটির রিপোর্ট যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারাও অভিযোগের সত্যতা পায়। যা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ (ক-ঘ) ধারার লঙ্গন এবং ২৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও কোম্পানির ফান্ড ব্যাবহার করে ইস্যুকৃত শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে নকল অ্যাক্টিভ ট্রেডিং সৃষ্টি করেছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, গঠিত ইনকোয়ারী কমিটি তদন্তের পর এ অভিযোগেরও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। যা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ (ঙ) ধারার এবং উপধারা (৫) এর লঙ্ঘন এবং ২৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এ মামলার সাক্ষীরা হলেন- পূর্বের বাদী ও বিএসইসির তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার উল কবির ভূঁইয়া, পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, উপ-পরিচালক এ টি এম তারেকুজ্জামান, উপ-পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী ও উপ-পরিচালক সৈয়দ শফিকুল হোসেন।