Rejent-textile-IPOমোবারক হোসেন : পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি বাজারে নানামুখী গুজব ছড়িয়ে পড়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইলের। এরকম নানামুখী গুজবে কোম্পানির শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন টানা দর বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির উপর কোন নজরদার নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ন্ত্রন কাদের হাতে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বস্ত্র খাতের রিজেন্ট টেক্সটাইল নিয়ে ভিত্তিহীন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। তবে এসব খবরের উপর ভিত্তি করে কোম্পানিটির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবী, যে খবর ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব।

তবে কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই বেশ কিছুদিন ধরে রিজেন্ট টেক্সটাইল শেয়ার দর বাড়ছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে বিবেচিত হওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানকেই দুই দফা দর বৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। জবাবে দর বাড়ার নেপথ্যে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে। এদিকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে পরিচালকদের ইন্দন থাকতে পারে এমন অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা নোটিশ দেওয়ার বিষয়টিকে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’র এক ধরনের ‘সতর্ক বার্তা’ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে রিজেন্ট টেক্সটাইলকে ১০ ও ১২ এপ্রিল দুই দফা চিঠি দিয়েছে ডিএসই।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব রিয়াজুল হক শিকদার বলেন, শেয়ারদর বাড়ার কারন খুঁেজ পাচ্ছে না মালিক পক্ষ। শেয়ারদর কেন বাড়ছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি আমাদের কাছেই চমক বলে মনে হচ্ছে। দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কিংবা অন্য যে কোনো তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা ডিএসই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিই। বর্তমানে আমাদের কাছে সে রকম কোনো তথ্য নেই।’

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে এলেই কিছু কোম্পানির শেয়ার ‘অতিমূল্যায়িত’ হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ‘অতি মূল্যায়িত’ হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ ‘অতিমূল্যায়িত’ শেয়ারের ফাঁদে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। এসব শেয়ারের বিনিয়োগ তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না।

ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি এবং যে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়নি, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বিনিয়োগকারীরা এসব কথায় কান না দিয়ে অন্যের কথায় বিনিয়োগ করেন। ফলে এক সময় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৯ মার্চ রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর ছিল ২০.৯ টাকা। ১৩ এপ্রিল দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪.১০ টাকা। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩.২ টাকা বা ৬৩.১৫ শতাংশ। এসময় কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৩৪.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যদিও চলতি বছরে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১১ টাকায় হাতবদল হতে দেখা গেছে।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বাড়া প্রসঙ্গে একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানির পরিচালকদের কাছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার রয়েছে (৫৪.৫৪ শতাংশ); তাই অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে পরিচালকদের ইন্ধন থাকতে পারে। এভাবে দর বাড়িয়ে তারা নিজেদের শেয়ার বিক্রির পাঁয়তারা করছেন। কোম্পানির বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬.১৮ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৯.২৮ শতাংশ শেয়ার। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের বর্তমান পিই ৩০.৭৮।

তবে ব্যবসায়িক মুনাফার নিম্নমুখী প্রবণতায় তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। এদিকে, গত দুই সপ্তাহে ৬৩ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানিটির ব্যবসায়িক মুনাফার তেমন কোন উল্লম্ফন না হলেও হঠাৎ দর বৃদ্ধিতে কেউ কেউ খুশি হলেও দর বৃদ্ধির পিছনে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

আর্থিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রিজেন্ট টেক্সটাইল। তালিকাভুক্তির আগে ২০১৩ সালে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। এদিকে, ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু তালিকাভুক্তির বছরে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি ২০ লাখ ০৫ টাকা। যদিও অর্থ আইন অনুযায়ী কোম্পানিটিকে জুন ক্লোজিং করতে হওয়ায় এসময় ১৮ বছরের মুনাফা ঘোষণা করে কোম্পানিটি।

ডিএসই’র হিসাব বলছে, ১ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩১ জুন ২০১৬ ১৮ বছরে কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু অর্থ বছর (১২ মাস) যদি জুন ক্লোজিং গনণা করা হয়, তবে ১ জুলাই ২০১৬ থেকে ৩০ জুন ২০১৬ কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা টাকা। অর্থাৎ ২০১৩ ও ২০১৪ সালের তুলনায় কম। তাহলে কেন বাড়ছে কোম্পানির দর ?

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের লক-ইন উঠছে। যদিও তথ্য সূত্র বলছে, আইপিওতে আসা কোম্পানির প্রসপেক্টাস ইস্যু তারিখের পর থেকে ৩ বছর পর কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের লকইন উঠবে। কিন্তু যেসকল উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫ শতাংশের অধিক শেয়ার রয়েছে তাদের লক-ইন উঠবে ২ বছর পর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক-ইন উঠাকে কেন্দ্র করে বাজারে হরহামেসাই কারসাজি হয়ে থাকে। এখানে সর্বোচ্চ মুনাফা হাতিয়ে নেয় পরিচালকরা। লক-ইন সংক্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে বাজারে একটা ঘোলাটে পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি এসময় উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষ থেকে অসাধু লোকজন কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট উৎপাদনে আসছে এমন তথ্যও বাজারে ছড়িয়ে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে শেয়ার দর আকাশ চুম্বি হয়ে পড়ে। তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ার কারন দ্রুত খুজে বের করে বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিত।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহেও গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছিল বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিটি । ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ারের হাত বদল হয়েছে।আর পুরো সপ্তাহে এই কোম্পানির ৮৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছিল ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ওই সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৮২ লাখ ১৯ হাজার টাকার শেয়ারের হাত বদল হয়েছিল। যার বাজার মূল্য ৮৪ কোটি ১০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।