JMS_Health_12নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে রোগব্যাধির প্রকোপকাল বদলে যাচ্ছে! ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে এক সময় বাংলাদেশের বেশ পরিচিতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়ার এ বৈচিত্র্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে গ্রীষ্মকালে ঝড়, টানা বৃষ্টি এবং রাতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে সাধারণ মানুষ যেমন অবাক হচ্ছেন তেমনি হঠাৎ সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কখন কোন ধরনের ব্যাধি দেখা দিচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বছরের যখন তখন সাধারণ ঠান্ডাজ্বর, সর্দি, গলা ব্যথার পাশাপাশি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চলতি বছর আগাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, জুন-জুলাই মাস হলো ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে। জমে থাকা এ পানির কারণে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বাড়ে। তাই এ সময় বাড়ির আঙ্গিনায় বা অন্য কোথাও বৃষ্টির পানি যাতে জমে না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছর এ দুই মাসে প্রায় আটগুণ বেশি রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে এমনটি হচ্ছে।

গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৩ ও তিনজন। চলতি বছর একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৭৪ ও ৫২ জন।

চলতি বছরের মার্চে ১৩ জন এবং ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ জনসহ মোট ১৫৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তারা ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে দুজন রোগী এ জ্বরে আক্রান্ত হন।

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭১ জন।

চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ও গাঁটে ব্যথা এবং ত্বকে র্যা শ যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্পক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর্যা জিক ফিভারে পর্যবসিত হয়। ফলে রক্তপাত, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যাওয়া এবং রক্তপ্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে পর্যবসিত হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।

ডেঙ্গু চিকিৎসায় যা মনে রাখা উচিত

ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। রোগী ও রোগীর লোকদের অভয় দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করলেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়।

রক্ত বা প্লাটিলেট পরিসঞ্চালন অপরিহার্য- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

ডেঙ্গু মশা ও তার বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ দুটোই আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই চলতে হবে।

এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে দিনের বেলায়ই এ রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন স্থানে ৪/৫ দিন জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও পরিষ্কার পানি হলো এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থান। তাই মশা যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।