4bk1ab29010b2d2upc_800C450দেশ প্রতিক্ষণ, ডেস্ক : সৌদি আরব অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক অঙ্গনে ব্যাপক ভাঙ্গন ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সৌদি আরবের আগ্রাসন, রক্তপাত ও সহিংসতাকামী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশটির সরকার যেমন অভ্যন্তরীণ তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার সম্মুখীন তেমনি আঞ্চলিক অঙ্গনেও কঠিন চাপের মুখে পড়েছে।

সৌদি আরবের সরকার বিরোধী আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রখ্যাত আলেম শেখ নিমর আল নিমরের জন্মভূমি আল আওয়ামিয়ে শহরে হামলা চালিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা ও ১৬ জনকে আহত হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর সৌদি আরবের আদালত জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী তৎপরতার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে শেখ নিমরকে শিরশ্ছেদ করার হুকুম জারি করে এবং গত বছর জানুয়ারিতে সেই রায় কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি সরকারের পরিকল্পিত ওই হত্যাকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানায় এবং জনগণও সরকারের এ অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

ধর্মের নামে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ উস্কে দিতে অভ্যস্ত সৌদি সরকার শুধু শেখ নিমরকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি একই সঙ্গে উন্নয়নের কথা বলে শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় আল মাসুরা এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। ওই এলাকার শিয়া মুসলিম জনগণ বহুদিন ধরে সৌদি সরকারের অন্যায় অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছে। খোদ সৌদি আরবের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান গণঅসন্তোষ থেকে বোঝা যায়, সরকার ব্যাপক দমনপীড়ন, ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা সত্বেও জনগণের প্রতিবাদের মাত্রা তো কমেনি বরং দিনকে দিন তা বাড়ছে।

সৌদি সরকার দীর্ঘদিন ধরে জনগণের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার হরণ করে চলেছে এবং পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলে বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা সৌদি আরবকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। সৌদি কর্মকর্তাদের এ নতজানু অবস্থানের কারণে দেশটির জনগণ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।

সৌদি সরকার একদিকে গণঅসন্তোষ কমিয়ে আনতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে অন্যদিকে, ইয়েমেন যুদ্ধেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে সৌদি আরব এখন কার্যত ইয়েমেন যুদ্ধের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে এবং যতই দিন যাচ্ছে ততই পরাজয়ের আলামত ফুটে উঠছে।

ইয়েমেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবের ৭০০ এরও বেশি সামরিক যান, হেলিকপ্টার ও ট্যাংক ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ইয়েমেনের বিপ্লবী যোদ্ধারা গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রথমদিকে তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এখন তারা সৌদি আরবের অভ্যন্তরে আঘাত হানছে।

আমেরিকা ও ইসরাইলের সর্বাত্মক সাহায্য সমর্থন নিয়েও সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে কোনো সাফল্যই অর্জন করতে পারেনি। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরব ভেবেছিল খুব সহজেই তারা জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ বাহিনীকে পরাজিত করে ইয়েমেন দখল করে নেবে এবং পছন্দের সরকার বসাবে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি এবং ইয়েমেন নয় বরং সৌদি আরবই পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ইয়েমেন যুদ্ধ সৌদি আরবের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।