dse-cseএইচ কে জনি/বিশেষ প্রতিবেদক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ অনুক‚ল পরিবেশ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই নিম্নমুখী হচ্ছে বাজার। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কমছে বাজার মূলধন। এছাড়া গত সাড়ে আট মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম অবস্থানে রয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন।

বিষয়টি যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে, ঠিক তেমনি বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে এর প্রকৃত কারণ অজানাই রয়ে গেছে। আর এ কারনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজারের ভারসাম্য ধরে রাখতে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ছাড়া বাকিগুলো পুরোপুরি নিস্ক্রিয় ভুমিকা পালন করছে।

পোর্টফলিও ম্যানেজারসহ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বর্তমানে সাইডলাইনে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া, বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন না বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। পরিণতিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না।

ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে ৩৬৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বা সাড়ে ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

জানা যায়, বাজারে ভারসাম্য না থাকায় পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকরা বিনিয়োগে না এসে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এক প্রকার নিষ্ক্রিয়তায় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট চলছে। বাজার স্থিতিশীল করার রক্ষাকবচ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতা চেয়ে বিক্রেতার ভুমিকা বেশি পালন করেছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। তবে বাজারে যার যার অবস্থানে থেকে বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করলে রাজনৈতিক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে না এমন আশাবাদব্যক্ত করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, বর্তমান বাজারকে স্থিতিশীল পর্যায় বজায় রাখার জন্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হবে।

জানা গেছে, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে পোর্টফলিও ম্যানেজাররা বিনিয়োগে না এসে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। যারা মধ্য কিংবা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেন তারা আগামীতে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগে আসছে না। দেখা গেছে, একজন পোর্টফলিও ম্যানেজার ৩ মাসের সময় নিয়ে কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। তার লক্ষ্য থাকে ৩ মাস পর সে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা নেবে কিংবা পুনরায় কিনে সমন্বয় করবে। কিন্তু অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে তারা বর্তমানে বিনিয়োগে না এসে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের রেশ এখনো যায়নি। অনেকে এখনো লোকসানে আছে। ফলে এ রকম অন্ধকার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করে নতুন করে কেউ লোকসানে যেতে চাইবে না। তারা আরো জানান, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন।

তারা জানান, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় শুধুমাত্র নীতিমালা প্রনয়ন ও বাজার পর্যবেক্ষনে কমিটি গঠন করলেই হবে না। বরং এসব পদক্ষেপ ও নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে কি না- তা মনিটরিং করা দরকার।