SUCHOKফয়সাল মেহেদী, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ১৮ কোম্পানির শেয়ারদর বর্তমানে ফেস ভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৬৬ কোটি ৪৯ লাখ ১১ হাজারেরও বেশি। এ ছাড়াও বেশকিছু কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ফেস ভ্যালুতে বা এর কাছাকাছি দরে।

মূলত পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা, ধারবাহিক লোকসান, উৎপাদন বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় দর নেমেছে ফেস ভ্যালু বা তারও নিচে। এতে কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাইব্যাক আইন না থাকায় কোম্পানিগুলোতে আটকে থাকা পুঁজি ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে তাদের।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে বাইব্যাক আইন থাকায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিশ্চয়তাও রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে দাবি তুললেও এদেশে আজ পর্যন্ত আইনটি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নতুন-পুরাতন মিলে ইতোমধ্যে বেশকিছু কোম্পানিতে পুঁজি আটকে গেছে। যা ফেরত পাওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আর পুঁজির নিশ্চয়তা না থাকায় নতুন করেও বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই। তাদের মতে, পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও বিনিয়োগকারী বান্ধব করতে বাইব্যাক আইন বাস্তবায়ন করে বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ফেস ভ্যালুর নিচে কেনাবেচা হচ্ছে তার মধ্যে- বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার ৯.৮০ টাকা,

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের ৯.৪০ টাকা, পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ৮.৮০ টাকা দরে লেনদেন হয়েছে। এদিকে বস্ত্র খাতের তাল্লু স্পিনিং মিলসের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৯.৮০ টাকা, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের ৯.৪০ টাকা, জেনারেশন নেক্সটের ৯.২০ টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং মিলসের ৯ টাকা, ফ্যামিলি টেক্সের ৮.১০ টাকা, ঢাকা ডাইংয়ের ৭.৯০ টাকা, মেট্রো স্পিনিংয়ের ৭.৮০ টাকা, দুলামিয়া কটনের ৮ টাকা দরে।

প্রকৌশল খাতের সুহুদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ৯.৭০ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে। আর খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের মেঘনা পেটের শেয়ার ৯ টাকা, কাগজ ও মুদ্রণ খাতের খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার ৮ টাকা, ওষুধ ও রসায়ন খাতের বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ার ৭.৭০ টাকা দরে লেনদেন হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার ৬.১০ টাকা এবং বিডি সার্ভিসেসের শেয়ার ৫.৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

এ ছাড়াও ব্যাংক খাতের আইসবি ইসলামী ব্যাংকের ৪.৮০ টাকা লেনদেন হচ্ছে। এদিকে ফেস ভ্যালুতে লেনদেন হচ্ছে মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, এক্সিম ব্যাংক ও জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতা মিজান-উর-রশিদ চৌধুরি বলেন, এ দেশে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির কোনো নিশ্চয়তা নেই। খারাপ কোম্পানি মার্কেটে এসে বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটে নিচ্ছে। ফলে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিশ্চয়তা ও বাজারকে গতিশীল করতে বাইব্যাক আইন বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। আইনটি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহি হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

অভিহিত মূল্যের তুলনায় সামান্য বেশি দরে (সর্বোচ্চ ১১ টাকায়) কেনাবেচা হয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফ্যামিলিটেক্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, সিএনএ টেক্সটাইল, দেশবন্ধু পলিমার এবং শাইনপুকুর সিরামিক্স কোম্পানির শেয়ার। এ ছাড়া অভিহিত মূল্যের তুলনায় সর্বোচ্চ দ্বিগুণ দরে (২০ টাকা) কেনাবেচা হচ্ছে বাকি ৮০ কোম্পানির শেয়ার।

দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত ৪০টি, তিনগুণ থেকে চারগুণ ১৮টি, চার গুণ থেকে পাঁচ গুণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে ১৫ কোম্পানির শেয়ার। পাঁচ থেকে দশগুণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে ৪০ কোম্পানির শেয়ার। ১০ থেকে ২৭ গুণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে ৪০টির শেয়ার। এ ছাড়া ৩১ গুণ থেকে ৮৫ গুণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে ১১ কোম্পানির শেয়ার।