Companyfinance_bg20160806095640

আসিফুজ্জামান পৃথিল : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গেইনারের শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে লক্ষ্যনীয় হারে তুলনা মূলক দূর্বল ও স্বল্প মূলধনী প্রতিষ্ঠান অবস্থান করছে। কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থান দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যান্য দিনের মতো আজও দূর্বল ৩টি কোম্পানি গেইনারের শীর্ষে অবস্থানে ছিল। এগুলো হলো- ইন্ট্যারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, সায়হাম কটন মিলস এবং ফুয়াং ফুডস। ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির বদলে দূর্বল প্রতিষ্ঠানের গেইনারের শীর্ষে অবস্থানকে মাথায় রেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে সতর্কতার সাথে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষক এবং বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল ৬.৩৩ শতাংশ দরবৃদ্ধি পেয়ে গেইনারের দুই নম্বরে অবস্থানে ছিল ইন্ট্যারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। আর্থিক খাতের এই প্রতিষ্ঠানের সমাপনী দর ছিল ১৬.৮০ টাকা। এদিন হাতবদল হওয়া প্রতিটি শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১৭ টাকা এবং সর্বনিম্ন দর ছিল ১৫.৭০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ৮০ লাখ ২০ হাজার ৪৪৯টি শেয়ার মোট ১ হাজার ৫৯২ বার হাতবদল হয়েছে।

ইন্ট্যারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি একটি দূর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৮৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভের পরিমাণ মাত্র ৪৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিগত বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে মাত্র ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ এবং ২০১০ সালে যথাক্রমে ৭৫ ও ৬০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছিল। ২০১১ সালে তা একলাফে ৫ শতাংশে নেমে আসে। এর পরের তিন বছর প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড প্রদান করেনি। সর্বশেষ প্রান্তিক অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১২.৮৬ টাকা। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি ০.০৬ টাকা লোকসান গুনেছে। এবং এই ৩ মাসে প্রতিষ্ঠানটির মোট লোকসান ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

গেইনারের ৭ নম্বরে অবস্থান করা সায়হাম কটন মিলসও একটি দূর্বল মৌলভিত্তির প্রতিষ্ঠান। আজ কোম্পানিটির ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার মোট ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৮ টি শেয়ার মোট ৯৩৯ বার হাতবদল হয়েছে। বস্ত্র খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির সমাপনী শেয়ারদর ছিল ১৮.৮০ টাকা। সর্বোচ্চ শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা এবং দিনের সর্বনিম্ন দর ছিল ১৮.২০ টাকা। সারাদিনের লেনদেন শেষে কোম্পানির শেয়ারদর ৪.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সায়হাম কটনের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৪৮ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ১১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে স্টক ডিভিডেন্ড এবং ক্যাশ ডিভিডেন্ড মিলিয়ে মোট ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.২৬ টাকা। ২য় প্রান্তিকে ইপিএস এর পরিমাণ ছিল ০.৩২ টাকা। ৩য় প্রান্তিকে ইপিএস ০.২৯ টাকা। ৯ মাসে মোট ইপিএস এর পরিমাণ মাত্র ০.৮৭ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২য় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৩য় প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সায়হাম কটনের ৯ মাসে মোট মুনাফা ১২ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২২.৫৯ টাকা।

এদিকে খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের প্রতিষ্ঠান ফুয়াং ফুডস গেইনারের ৮ নম্বরে অবস্থান করেছে। এদিন প্রতিষ্ঠানটির সমাপনী দর ছিল ১৯.২০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার সর্বোচ্চ ১৯.৭০ টাকা দরে হাতবদল হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ছিল ১৮.১০ টাকা। ফুয়াং ফুডসের শেয়ারদর ৪.৩৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকার মোট ১ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ৫৫৭টি শেয়ার ২ হাজার ৯৪০ বার হাতবদল হয়েছে।

ফুয়াং ফুডসের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মোট রিজার্ভের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়া প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ সালে ডিভিডেন্ড কমেছে। এই বছর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) মাত্র ০.০৬ টাকা। ২য় প্রান্তিকে ইপিএস এর পরিমাণ ০.১৬ টাকা। ৩য় প্রান্তিকে ইপিএস ০.২২ টাকা। ৯ মাসে মোট ইপিএস মাত্র ০.৪৩ টাকা। প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুনাফা করেছে। ২য় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ১ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩ প্রান্তিকে মুনাফার পরিমাণ ২ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটি মোট মুনাফা করেছে মাত্র ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফুয়াং ফুডসের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১২.১৭ টাকা।

দূর্বল কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ কি, তা জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডঃ আবু আহমদ বলেন, বাজারে যারা মূলত জুয়া খেলতে পছন্দ করে তারাই এই ধরণের কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে। এবং এই সকল শেয়ার নিয়েই কারসাজি বেশী হয়। অনেকদিন থেকেই এমনটা হচ্ছে। তিনি এই ধরণের আচরণকে বাজারের অসুস্থতা বলে উল্ল্যেখ করেন। আবু আহমেদ আরও বলেন এ ধরণের শেয়ারের দর যেভাবে দ্রুত বাড়ে তেমনি দ্রুত কমে যায়। ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে না পারলে এমনটা চলতেই থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র এই দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। তাদের উচিৎ এই ধরণের প্রতিষ্ঠানকে ওটিসিতে নিয়ে যাওয়া। যতদিন এই ধরণের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত থাকবে, এসব নোংরা খেলা চলতেই থাকবে।