1468413110

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : সামান্য মুনাফার লোভে মাছে ভেজাল না দিতে মৎস্য ব্যবসায়ী, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানীতে সম্পৃক্তদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষের একটু ভেজাল দেবার প্রবণতা রয়েছে। এই ভেজাল দিয়ে বেশি মুনাফা করতে গিয়ে একেবারে নিজের ব্যবসারও সর্বনাশ। দেশেরও সর্বনাশ। এই সর্বনাশের পথে যেন কেউ না যায়। বিশেষ করে আমাদের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।’

আজ বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২০১৭ উদযাপন উপলক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানীর ক্ষেত্রে সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোন রকম অভিযোগ যেন আমাদের বিরুদ্ধে না আসে। মাছচাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো-সামান্য একটু মুনাফার লোভে নিজের ব্যবসাটাও যেমন নষ্ট করবেন না, তেমনি দেশের রপ্তানী বা পণ্যটাও আপনারা নষ্ট করবেন না।’

বর্তমানে দেশেও মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। আগে একজন রিক্সাওয়ালা যেখানে শুধু চাল কিনতে সক্ষম ছিল, সে এখন একটু মাছও সাথে কিনতে পারে। একজন দিন মজুরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য চাহিদাও বাড়বে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে, আমাদের বাজারও ততটা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

প্রধানন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেখলাম চিংড়ি রপ্তানী বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি নেবে না। কেননা, চিংড়ি মাছের মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে ওজন বাড়িয়ে সেটা রপ্তানী করা হয়। এটা যখনই ধরা পড়ে সাথে সাথেই চিংড়ি রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য সেই সময় ৪০ কোটি টাকা এবং একটি কমিটি করে দেই। সেই টাকা দিয়ে প্রত্যেকটি হ্যাচারি উন্নত করা হয়। ধীরে ধীরে মানসম্পন্ন রপ্তানীর মধ্যদিয়ে আবার মৎস্য রপ্তানী সচল হয়।

মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহমুদুল হাসান খান বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছিলাম যেমন আমাদের কৈ মাছ, মাগুর মাছসহ দেশী মাছের ওপর গবেষণার জন্য। আগে দেখতাম তেলাপিয়া ও কার্প জাতীয় মাছ নিয়েই কেবল গবেষণা চলত। কোন মাছটার বাজারে চাহিদাটা বেশি সেটা নিয়েই আমাদের গবেষণা করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং প্রক্রিয়াজাত করে সেটা বিদেশে রপ্তানী করা প্রয়োজন।

১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এবারের মৎস সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে। মৎস্য সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাছ চাষে গড়বো দেশ, বদলে দেব বাংলাদেশ।’

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে গণভবনের লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা ছেড়ে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনের শুভ সূচনা করেন। তিনি পাট, চা, চামড়ার সাথে মাছকেও বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। মৎস্যসম্পদ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় প্রধান খাত হবে বলে জাতির পিতা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

তিনি বলেন,আজ দেশের ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা মৎস্য সম্পদের সাথে সম্পর্কিত। জিডিপিতে মৎস্যসম্পদের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের ৬০ ভাগ যোগান দেয় মৎস্য খাত। জাতির পিতার সেই আশাবাদ এখন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে।