image_174445.jobi-logo-02

মোঃশোয়াইব, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে চারজনকে পাঁচ মেয়াদে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও প্রো-ভিসি পদে এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বরাবরেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি শূন্য থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও প্রো-ভিসি পদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে প্রো-ভিসিহীন অবস্থায় চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চাপ একহাতে সামলাচ্ছেন জবি ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তার কোনো কারণে অনুপস্থিতি বা অসুস্থ হলে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে প্রশাসনিক কর্মকান্ড।

গত ৮ই মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রো-ভিসি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রো-ভিসি না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি নেই বা স্বল্পসময়ে শূন্য হবে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত প্রো-ভিসি নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, শূন্যপদে ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে প্রো-ভিসি পদ নেই। আইন সংশোধন করের প্রো -ভিসি পদ সৃষ্টি করে সেখানে নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের নির্দেশনার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রো -ভিসি নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বাড়ানো এবং ভিসির উপর চাপ কমানোর জন্য আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি পদে নিয়োগের জন্য জোরালো দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলেন, ভিসি বিভিন্ন কাজে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করলে প্রো-ভিসির প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে প্রো-ভিসির পদই নেই। প্রো-ভিসি থাকলে তিনি ভিসির জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়ক হন। আইন সংশোধন করে এ প্রশাসনিক পদে নিয়েগের বিষয়টি সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। এ পদ সৃষ্টি করে দ্রুত প্রো-ভিসি নিয়োগ দানের দাবি জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০শে মার্চ ২০১৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান যোগদান করেন। এরপর মেয়াদ শেষে গত ২০শে মার্চ পুনঃনিয়োগ পান তিনি। প্রো-ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজ এক হাতেই করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কাজ, সেমিনারসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে থাকেন তিনি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাঁকজমক বা প্রটোকল ছাড়াই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিভিন্ন সংকট ও সমস্যার সব চাপ তাকেই সামলাতে হয়।

ভিসি মীজানুর রহমান জানান, সরকার প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দিলে কাজের চাপ কমে। সাবলীল ও সুন্দরভাবে সব কাজ করা সম্ভব হয়। এ প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিসি ও প্রো-ভিসির মধ্যে মতবিরোধ, মনোমালিন্যের কারণে সরকার এ পদটিতে অনেক দিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়নি।

প্রো-ভিসি নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রো-ভিসির পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিসি প্রশাসনিক কাজের অনেক চাপ সামলান। তিনি একহাতে সামলাতে না পারলে অনেক সময় ট্রেজারারের উপর চাপিয়ে দেন। অনেক প্রশাসনিক কাজ ট্রেজারারকে করতে হয়। ভিসির অনুপস্থিতে কাজে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। প্রো-ভিসি থাকলে ভিসির কাজে সহায়ক হন। কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়া উচিত। এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো একই থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুর মোহাম্মাদ বলেন, প্রো-ভিসি নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রালয় যেহেতু পদক্ষেপ নিচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুতই এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পাবেন বলে আশা করেন তিনি। বর্তমান ভিসি প্রশাসনিক কাজের চাপ একাই সামলাচ্ছেন। অনেক ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ অবস্থায় প্রো-ভিসি থাকলে ভিসি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একাডেমিকসহ সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারেন। অন্যদিকে প্রো-ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারেন।