1477308235 (1)

বিশেষ প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারনী মহল বদ্ধপরিকর। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার বলেই পুঁজিবাজার ফিরে পেতে চলেছে তার হারানো যৌবন। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে আজ অবধি বাজারের উন্নয়নে নেয়া হয়েছে অসংখ্য সংস্কার কর্মসূচী। এর সুফলও পেতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এতো সংস্কারের ফলে বাজার তার স্বাভাবিক ধারা ফিরে পেতে শুরু করলেও বিনিয়োগকারীরা ফিরে পায়নি কিছু কোম্পানির প্লেসমেন্টের অর্থ। অবশ্য প্লেসমেন্টে বিনিয়োগকৃত ওই অর্থ আদৌ ফিরে পাবেন কি-না তাও জানেন না ওইসব বিনিয়োগকারীরা। যদিও এরমধ্যে একটি কোম্পানি নতুন বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসার জন্য সম্প্রতি রোড শো করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশার আলো দেখলে তা কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে কিংবা বিনিয়োগের সমপরিমাণ অর্থ ফেরত পাবেন কি না- এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার আটকে রয়েছে। আর এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করা এসব অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন প্লেসমেন্টধারীরা। তবে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায়ে ও তারল্য প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের আটকে থাকা এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজারে আনা জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রত্যাশায় ৫ কোম্পানির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনে আটকে গেছেন বিনিয়োগকারীরা। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম ও নানান অভিযোগের কারণে এসব কোম্পানি বাজারে আসতে পারছে না। প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের ৭২২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আটকে গেছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ শেয়ার বাজারের বাইরে চলে যাওয়ায় বাজারে তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই বিপুল পরিমান অর্থ মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনলে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধিতে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এজন্য কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নির্দেশনা জারি করা তাগিদ দেন তারা।

জানা গেছে, আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদনের আগে ৫ কোম্পানি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৬ কোটি শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে জিএমজি এয়ারলাইন্স। কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি প্রিমিয়াম নিয়েছে ৪০ টাকা। ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ২৪০ টাকা প্রিমিয়ামসহ সর্বমোট ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ। এ কোম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছে। এনার্জি প্রিমা নামে আরেক কোম্পানি ১ কোটি ৫৬ লাখ শেয়ার বিক্রি করে ১৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। এ কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম নিয়েছে ৮৯.৪২ টাকা। এছাড়া কেয়া কটন মিলস ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে সমপরিমান প্রিমিয়ামসহ ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

তবে ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্যে রোড শো করেছে এসটিএস হোল্ডিংস (এ্যাপোলো হসপিটাল)। কোম্পানিটি ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রি করে ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। এ কোম্পানি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়েছে।

জানা গেছে, উল্লেখিত কোম্পানিগুলো বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন করে। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিপর্যয়ের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ওই সময় বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কার্যকারিতা স্থগিত করা হলে এসব কোম্পানির আইপিও আটকে যায়। তবে বর্তমানে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কার করা হলেও এসব কোম্পানি এখনও আইপিও ছাড়ার অনুমোদন পায়নি। কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দাবি এর নেপথ্যের কারণ বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। তাই এ বাজারের স্থিতিশীলতায় তারল্য প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা উচিত বলেও মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, সরকারি আইন মেনেই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করতে পারে। তবে শেয়ার আফলোড না হলে লাভসহ ওই টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।