ipo-1আমাতুস সালাম কল্যান চৌধুরী, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন এবং নিয়ম মত রোড শো শেষ করার পরও পুঁজিবাজারে আসতে পারছে না অন্তত ১০টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামসহ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংয়ের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে গিয়ে ২-৩ বছর ধরে আটকে আছে।

কোম্পানিগুলো হচ্ছে- এনার্জি প্যাক, রানার অটোমোবাইলস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যাপোলো হাসপাতাল, আমরা নেটওয়ার্ক, বেঙ্গলপলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, ডেল্টা হসপিটাল, ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, সামসুল আলম রিয়েল এস্টেট এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট।

এর মধ্যে এনার্জি প্যাক, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস দুই থেকে তিন বছর ধরে আটকে আছে। ফলে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের যে পরিকল্পনা করেছিলো কোম্পানিগুলো তা করতে পারছে না। উল্টো ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আর এ ভোগান্তির কারণে ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে।

নিয়ম অনুসারে, প্রিমিয়ামের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে গেলে পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ তে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসতে হয়। আর এ আইন ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। এরপর কয়েকবার আইনটির সংশোধন হয়।

এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জে (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) আর্থিক প্রতিবেদন আবেদন জমা দিয়েছে। এরপর অনুমোদনের জন্য রোড শো সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কোনো কোম্পানি টাকা উত্তোলন করতে পারেনি।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৪ সালে কমিশন অনুমোদন দেওয়ার পরও পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি এনার্জি প্যাক ও আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। এছাড়াও আবেদন করে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল রোড শো করেছে অ্যাপোলো হাসপাতাল।

একইভাবে একই বছরের ৯ অক্টোবরে বেঙ্গলপলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, ১৯ অক্টোবর রানার অটোমোবাইলস, ২৪ অক্টোবর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, ৬ অক্টোবর ডেল্টা হসপিটাল, ১৮ অক্টোবর ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রোড শো করেছে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সামসুল আলম রিয়েল এস্টেট এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট রোড শো সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বাজারে আসতে পারেনি।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক ঋণ পরিশোধ, আধুনিকায়ন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা তুলবে। ২০১৫ সালের আবেদন করেও কোম্পানটি কেবল বিডিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অ্যাপোলো হাসপাতাল বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করে আর এগুতো পারে নি।

অন্যদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মতোই স্থবির হয়ে পড়েছে বিএসইসির আইপিওর অনুমোদন। ফলে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ও অর্থনীতির আকারে তুলনায় পুঁজিবাজার বড় হচ্ছে না। চাহিদা থাকা স্বত্বেও নতুন করে ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আসছে না। কমে আসছে নতুন তালিভুক্ত কোম্পানির হার।

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০১১ সালে ১৪টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পরের বছর ২০১২ সালে ১৭ কোম্পানি, ২০১৩ সালে ১২ কোম্পানি, ২০১৪ সালে ১৪ কোম্পানি, ২০১৫ সালে ১৭টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে টাকা তুলতে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে আইপিওর অনুমোদন কমে যায়। ওই বছর মাত্র ৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। আর চলতি বছরের অর্ধেকের বেশি পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, বুক বিল্ডিং আইন তৈরি এবং এ আইনের বেশ কিছু সংশোধনীর কারণে বেশ কিছু কোম্পানির আবেদন কমিশনে জমা পড়ে আছে। তিনি বলেন, রোড শোর কতো সময় পরে বিডিং ও আইপিও অনুমোদন হয়েছে সেটা বড় বিষয় না। একটি কোম্পানি অনুমোদন পাওয়ার মতো সব শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যত দ্রæত শর্ত পরিপালন করবে তত দ্রæত অনুমোদন পাবে।