law

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ফের পিছিয়েছে। মামলাটিতে বাদীপক্ষের সাক্ষী গতকাল তার সাক্ষ্য দিতে না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছেন পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ এ মামলায় বাদীপক্ষের অন্যতম সাক্ষী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক উপ-পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে এদিন তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ফলে তার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বাদীপক্ষের আইনজীবী সময়ের আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ।

এর আগেও শুভ্রকান্তি চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানো হয়েছিল। বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং- এর শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার সাক্ষীদের মধ্যে শুভ্রকান্তি চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৬ আগস্ট পূর্বনির্ধারিত থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। তাই তার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময়ের আবেদন করেছিলাম। মহামান্য ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেছেন। তবে এ মামলার পরবর্তী তারিখ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৯ ফেব্রæয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়। আর ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য দেন এ মামলাটির নিযুক্ত নতুন বাদী ও প্রধান সাক্ষী বিএসইসি’র উপ-পরিচালক (আইন) এ.এস.এম. মাহমুদুল হাসান। মূলত পূর্বের বাদী কমিশনের তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ায় তার পরিবর্তে গত বছরের ২৮ নভেম্বর এ.এস.এম. মাহমুদুল হাসানকে মামলাটির বাদী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

এদিকে এ মামলার অন্যতম সাক্ষী বিএসইসি’র সাবেক উপ-পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৫ জুন নির্ধারণ করা হয়। তবে এ নির্ধারিত দিনে তিনি ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত থাকায় সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু এ নির্ধারিত দিনেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি।

মার্কের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাটি গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত থেকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। আর চলতি বছরের ৯ ফেব্রæয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে ১৭ বছর পর বিচারকার্য শুরু হয়।

চার্জ গঠন শেষে ওই দিন এ মামলার তিন ব্যক্তি আসামীর (মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই এবং পরিচালক সালমা আক্তার) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। ৯ এপ্রিল এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

জানা গেছে, প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটিসহ চার জনকে আসামী করে ২০০০ সালে ১১ এপ্রিল মামলা করা হয়। বিএসইসি’র পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছিলেন কমিশনের তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন। সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে যার মামলা নং ১৩৬৪/২০০০। মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হওয়ায় মামলাটির নতুন নম্বর দেওয়া হয়েছে ০৩/২০১৬।

মামলার নথী সূত্রে জানা গেছে, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কোম্পানির নামে আসামিরা অক্টোবর ১৯৯৬ এ প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে কোম্পানির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০০% প্রিমিয়ামে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করে।

প্রসপেক্টাসে আইপিও ফান্ড এর ব্যাবহার সম্পর্কে যে অঙ্গীকার করেছে, তাও পালন করেননি। অস্তিত্বহীন প্ল্যান্ট এবং মেশিনারিজকে কোম্পানির সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছে এবং মালিকানাধীন প্ল্যান্ট ও মেশিনারিজের অধিক মূল্য দেখিয়েছে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ যে শর্তাধীনে ১০০% প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রিতে সম্মতি দেয়, তাও তারা ভঙ্গ করেছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন অক্টোবর ১৯৯৯ এ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২১ ধারার ক্ষমতাবলে উপরোক্ত অভিযোগসমূহ তদন্ত করার জন্য একটি ইনকোয়ারী কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে, ইনকোয়ারি কমিটির পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বুয়েট কনসালটেন্টের মাধ্যমে ইনকোয়ারি কমিটির রিপোর্ট যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারাও অভিযোগের সত্যতা পায়। যা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ (ক-ঘ) ধারার লঙ্গন এবং ২৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও কোম্পানির ফান্ড ব্যাবহার করে ইস্যুকৃত শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে নকল অ্যাক্টিভ ট্রেডিং সৃষ্টি করেছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, গঠিত ইনকোয়ারী কমিটি তদন্তের পর এ অভিযোগেরও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। যা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ (ঙ) ধারার এবং উপধারা (৫) এর লঙ্ঘন এবং ২৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এ মামলার সাক্ষীরা হলেন- পূর্বের বাদী ও বিএসইসি’র তৎকালীন উপ-পরিচালক আহমেদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার উল কবির ভুইয়া, পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, উপ-পরিচালক এ টি এম তারেকুজ্জামান, উপ-পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী ও উপ-পরিচালক সৈয়দ শফিকুল হোসেন।