gainer northanদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে নর্দার্ণ জুট মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার। পাট (জুট) খাতের এই স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিকহারে বেড়ে বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে উঠেছে। তবে কোম্পানির আয়ের সঙ্গে শেয়ারের বাজারদরের কোনো সংগতি পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকেরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, একবছরের ব্যবধানে মাত্র ০.২৮ ইপিএস বাড়ায় ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে শেয়ারদরে। গত ১৬ নভেম্বর নর্দার্ণ জুটের শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১৯৯.১০ টাকা। সোমবার লেনদেনে শেয়ারপ্রতি দর ৭.৪৫ শতাংশ বা ৪৩ টাকা বেড়ে ৬২০ টাকায় উঠেছে।

শেয়ারটির এ দর গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ৬১৫.১০ টাকা। গেইনার তালিকায় গতকাল এ কোম্পানির অবস্থান ছিল চার নম্বরে আর দরবৃদ্ধির পাঁচ নম্বরে। এর আগের কার্যদিবসে শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ৫৭৭ টাকা।

ডিএসইতে গত একবছরে ১৯৪.৯০ টাকা থেকে ৬২০ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে নর্দার্ণ জুটের শেয়ার। আলোচ্য সময়ে শেয়ারটির দরবৃদ্ধির হার ২১৮.১২ শতাংশ বা ৪২৫.১০ টাকা।

তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান করা এ কোম্পানি তৃতীয় প্রান্তিকে হঠাৎ করেই বড় অংকের মুনাফা করে। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক মিলে অর্ধবার্ষিকে (জুলাই-ডিসেম্বর’ ১৬) শেয়ারপ্রতি ৪.২৩ টাকা লোকসান করলেও তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’ ১৭) শেয়ারপ্রতি আয় করে ৪.৭৬ টাকা।

এই অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি আয় করে ০.৫৩ টাকা, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ০.২৫ টাকা। গতকালের লেনদেনে শেয়ারপ্রতি বাজারদর ছিল ৬১৫ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৮৭০.৪২।

এদিকে ২০১৬ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ০.৭২ টাকা। সেই হিসেবে বর্তমানে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৮৫৪.৩১। নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের শেয়ারপ্রতি আয় ও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ -এর উপরে অবস্থান করা মানেই সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু নর্দার্ণ জুটের পিই রেশিও ৮০০ -এর উপরে অবস্থান করেছে। তবুও শেয়ারটির দর যে হারে বাড়ছে। তাতে মনে হচ্ছে, এর পেছনে কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে। তাই বিনিয়োগের জন্য এসব কোম্পানি এড়িয়ে চলতে হবে।

১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া নর্দার্ণ জুটের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়।

এর আগের সমাপ্ত অর্থবছরে ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে মাত্র ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ রয়েছে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকী শেয়ারের মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।