প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রিতে অনিয়মে ওয়েস্টার্ন মেরিনকে নোটিশ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার দেলোয়ার হোসেন আইন লঙ্ঘন করে কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছেন । তার হাতে থাকা ২ হাজার ৪০টি প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রিতে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ঘোষণা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি নেওয়া হয়নি, যা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডার দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানতে চেয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। একই সঙ্গে সিএসইর ট্রেকহোল্ডার কিশওয়ার সিকিউরিটি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্যও জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) মোহাম্মাদ শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত মাসের শেষ দিকে তাদেরকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সিএসইর ট্রেকহোল্ডার কিশওয়ার সিকিউরিটি ইনভেস্টমেন্টের গ্রাহক (গ্রাহক নম্বার ৪৬১) দেলোয়ার হোসেনের নামে ২০৪০টি প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে বিএসইসির কোনো আইন অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ সিএসইর। এ শেয়ারহোল্ডারধারী চট্টগ্রামের বাংলাবাজারের বাসিন্দা।
যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন ছাড়া মূলধন বৃদ্ধির জন্য কোনো কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করা যাবে না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এ প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী কোনো কিছুই অনুসরণ করেননি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টকসহ মোট ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কিন্তু ২০১৫ সালের এজিএম করতে না পারায় কোম্পানিটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে নামিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কোম্পানিটির সর্বশেষ এজিএম হয়েছিল ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর পর আইনি বাধ্যবাধকতায় সে বছর দ্রুততম সময়ে এজিএম অনুষ্ঠান করে। তবে ২০১৫ হিসাববছরে যথাসময়ে পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে না পারায় লভ্যাংশ ও এজিএমের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কোম্পানিটি। এজিএম আয়োজনে স্বাভাবিক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কোম্পানি নিবন্ধকের এখতিয়ারভুক্ত সময়ও পেরিয়ে যায়।
আর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বিলম্বিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই উচ্চ আদালতের অনুমোদন চেয়েছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। আর এ-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের হতাশা দেখা গিয়েছিল।
সম্প্রতি ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমতি দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে একসঙ্গে দুই বছরের এজিএম করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানিতে বর্তমানে শেয়ারসংখ্যা রয়েছে ১২ কোটি ৫ লাখ সাত হাজার ৯০টি শেয়ার। মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।
বাকি ৪৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১০ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রকাশিত শীর্ষ ঋণখেলাপি ১০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকায়ও রয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন।