can texদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকানার খবর ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে কারা! এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারী প্রয়োজন। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইদানিং বিভিন্ন কোম্পানি মালিকানার খবর ছড়িয়ে শেয়ারের দর বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে, আর ঐ সকল শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এসব খবর ছড়িয়ে যারা ফায়দা লুটছে তাদের কি বিচার হবে না। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দায়ভার নিবে কে ?

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হস্তান্তরের গুজবের পর ও নতুন প্রকল্প চালুর গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছেন সুবিধাবাদীরা। একসময় মুনাফা লুফে তারা কেটে পড়েন। আর কপাল চাপড়ান বোকাসোকা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে এদের মধ্যে রাতারাতি অতি মুনাফালোভী কিছুসংখ্যক ডে ট্রেডারও রয়েছেন।

cna tex grapসম্প্রতি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকানার খবর ছড়িয়ে এক মাসে ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকার মধ্যেে উঠানামা করে । জানা যায়, সম্প্রতি হাক্কানী পাল্প, নাভানা সিএনজি, জিপিএইচ ইস্পাতসহ বস্ত্র খাতের কয়েকটি কোম্পানি নতুন প্রকল্প চালু করছে এমন খবর শোনা যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে হাক্কানী পাল্পসহ কিছু প্রতিষ্ঠান অচিরেই নতুন প্রকল্প চালু করবে, এমন খবর চাউর হয়ে গেছে। এ কারণে এক মাসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ৩১ শতাংশ। একইভাবে বাড়ছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। একশ্রেণির বিনিয়োগকারী মৌলভিত্তির বিচার না করে বিনিয়োগ করছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। শেয়ারের দরবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন খবর শোনার পরও তা কেয়ার করছেন না বিনিয়োগকারীরা। অথচ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজেরাই জানে না তাদের নতুন প্রকল্প চালুর খবর।

এছাড়া ফু-ওয়াং ফুড, বিচ হ্যাচারি, কেয়া কসমেটিকস, তুং হাই নিটিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে পুঁজিবাজারে এমন গুজবও রয়েছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠান বড় বড় গ্রুপের কাছে হস্তান্তর হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় হরহামেশা এসব খবর শোনা যাচ্ছে।

এদিকে মোহাম্মদ মোর্শেদ ও রোকসানা মোর্শেদের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের পারিবারিক সম্পর্ক্যে রয়েছে। এরকম গুজব ছড়িয়ে শেয়ার কারসাজি করছে। তবে এ কারসাজির সঙ্গে কোম্পানির পরিচালকরা জড়িত বলে একাধিক বিনিয়োগকারী দেশ প্রতিক্ষণ অফিসে ফোন করে অভিযোগ করেন। তারা কারসাজি হিসেবে এস আলম গ্রুপের নাম ব্যবহার করছে।

এ প্রসঙ্গে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল কোম্পানির সচিব দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, মালিকানা অথবা ব্যবসায় পরিবর্তন আসছে এমন কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। কোনো চক্র এ শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। সম্ভবত তারাই এ গুজব কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করছে।’

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বিচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব নূর ইসলাম বলেন, কারা খবর ছড়িয়েছে আর কারা দর বাড়িয়েছে আমরা কিভাবে বলবো। তবে র‌্যাগস গ্রুপের সাথে মালিকানা পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। এটা নিছক গুজব। কোনো চক্র এ শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। সম্ভবত তারাই এ গুজব কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করছে।’

সম্প্রতি শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই, যাতে শেয়ারদর বাড়তে পারে। ব্যবসায় পরিবর্তন আসছে কি না’এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে ‘এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে’ এমন খবর জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে, মালিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র এ শেয়ার কেনাবেচা করে স্বার্থসিদ্ধি করছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বেশিরভাগ সময় এসব গুজব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ছড়ানো হয়। তারা নিজেদের শেয়ার বেশি দরে বিক্রি করার জন্য এমন ফাঁদ পাতেন। পক্ষান্তরে কিছু না বুঝে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একসময় চরম মূল্যও দিতে হয় তাদের।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু কোম্পানি যে কোনো মূল্যে সব সময় আলোচনায় থাকতে চায়। সেজন্য তারা নিজেরাই বাজারে গুজব ছড়ান। এতে তারা সব সময়ই লাভবান হন। সমস্যায় পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। তবে প্রতিষ্ঠান হস্তান্তরের খবর কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানেন; তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে সেটা কাউকে জনানো হয় না। সেজন্য তারা বিষয়টি লুকিয়ে রাখে।’

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদল হলেই সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা রাতারাতি বদলে যাবে এটা ভাবা বোকামি। আবার নতুন প্রজেক্ট চালু করলেই প্রতিষ্ঠানের নিশ্চিত মুনাফা হবে, সেটাও বলা যায়। তাই এসব দিকে নজর না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তির ওপর জোর দেওয়া উচিত।’

এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নুরুল আজম বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তনের খবর ছড়িয়ে রমরমা ব্যবসা চলছে। একটি সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে এসব গুজব ছড়ায়। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হবেন।

উল্লেখ্য, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগাকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দেয়। এর বর্তমান রিজার্ভ ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।