Rejent-textile-দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস আইপিওর ১২০ কোটি টাকাই এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে কোম্পানির এ অব্যবহৃত টাকা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত আড়াই বছরেও আইপিও প্রক্রিয়ায় উত্তোলিত মূলধনের ৯৬ শতাংশ ব্যবহার করতে পারেনি। চট্টগ্রামের হাবিব গ্রুপের মালিকানাধীন এ কোম্পানি আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১২৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ১২০ কোটি টাকাই অব্যবহৃত পড়ে আছে।

আইপিও প্রক্রিয়ায় উত্তোলিত মূলধনের কতটুকু ব্যয় হয়েছে- এ সম্পর্কিত গত জুনের শেষে নিরীক্ষিত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। কোম্পানিটি এ প্রতিবেদন দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই ও সিএসইর কাছে জমা দিয়েছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, টেক্সটাইল বিভাগের সম্প্রসারণ ও নতুন যন্ত্রপাতি কেনার উদ্দেশ্যে আইপিওর টাকা উত্তোলন করলেও এখন তা বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। যদিও এ বিষেয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নেয়া হয়নি এবং শেয়ারহোল্ডারদেরও অনুমোদন নেয়া হয়নি।

এদিকে ব্যাংকে জমা রাখা আইপিওর অব্যবহৃত ১২০ কোটি টাকার ওপর অর্জিত সুদ বাবদ আয় থেকেই কোম্পানিটি গত বছর সবচেয়ে বেশি আয় করেছে। জানা গেছে, গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নন-অপারেটিং ইনকামই ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি। গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে রিজেন্ট টেক্সটাইলের নিট মুনাফা ছিল ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এসেছে ব্যাংক আমানতের ওপর অর্জিত সুদ থেকে। অর্থাৎ আইপিও টাকার ওপর সুদ না পেলে কোম্পানিটি লোকসানে পড়ার শঙ্কা ছিল। কোম্পানিটির বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি আইপিও টাকা ব্যাংকে জমা রেখে সুদ বাবদ ১৪ কোটি ২ লাখ টাকা আয় করেছে।

জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) অঞ্জন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, আইপিও প্রক্রিয়ায় উত্তোলিত মূলধনের বড় অংশ একেবারে নতুন তৈরি পোশাক (আরএমজি) প্রকল্পে খরচ করার কথা ছিল। লক্ষ্য ছিল এর আগে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প দাঁড় করানোর।

আমদানি করা কাপড়ে নয়, নিজের উৎপাদিত কাপড় দিয়েই আরএমজি করার পরিকল্পনা চলছে। এ জন্য অতিরিক্ত কিছু সময় দরকার। এ ছাড়া বিএমআরইর উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তারা জানান, কিছু কোম্পানি যে সময়মতো আইপিও টাকা কাজে লাগাচ্ছে না তা কমিশনের পর্যবেক্ষণে আছে। চাইলে এ ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কমিশন। তারা আরও জানান, আইপিও অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি মাসে জনসমক্ষে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংস্থার দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যৌক্তিক কারণ থাকলে আইপিওর টাকা খরচের সময় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। এক কোম্পানি কতবার সময় বাড়াতে পারবে, বিদ্যমান আইনে তার সুনির্দিষ্ট বিধান নেই-জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ কারণে কমিশনও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে আগামীতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার পরিকল্পনা আছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রিজেন্ট টেক্সটাইল ২০১৫ সালের অক্টোবরে আইপিও প্রক্রিয়ায় মোট ১২৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছিল। আইপিও প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণে ওই টাকা ব্যবহারের অনুমতি পায় ওই বছরের ডিসেম্বরে। গত ১৯ জুনের মধ্যে পুরো টাকা খরচের কথা ছিল। তবে গত পৌনে দুই বছরে এ টাকা থেকে মাত্র ৫ কোটি ২ লাখ টাকা বা মোটের চার শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এর মধ্যে আবার ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা খরচ করেছে আইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজার, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি ফি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ।

আইপিও টাকার বাকি ৯৬ শতাংশ এখনও পড়ে আছে। নির্ধারিত সময়ে টাকা খরচ করতে পারবে না জেনে গত বছরের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের থেকে সময় বাড়িয়ে নেয় রিজেন্ট টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি কিছু করতে পারেনি।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, বিদ্যমান টেক্সটাইল প্রকল্পের আধুনিকায়ন ও সংস্কারে সোয়া ৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা খরচ করার কথা ছিল। এ কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির এ খাতে খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫৭ লাখ টাকা।

অর্থাৎ আধুনিকায়নের প্রায় পুরো অর্থই পড়ে আছে। এর বাইরে নতুন তৈরি পোশাক কারখানা প্রকল্প স্থাপনের জন্য ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছিল তারা। কিন্তু গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি মাত্র ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা খরচ করেছে। অব্যবহৃত পড়ে আছে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।