textile lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানির শেয়ারের দিকে এবার টার্গেট পড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। ব্যাংক খাতের পর এবার প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে বস্ত্র খাত। তবে আবার কিছু কিছু টেক্সটাইল কোম্পানির প্রতি আগ্রহ কমও রয়েছে।  তাছাড়া বস্ত্র খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দাম কম থাকায় আগ্রহ বাড়ছে বলে সুত্রে জানায়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত রোববার তালিকাভুক্ত ২৯৮টি কোম্পানির প্রোপাইল আপডেট করেছে। এতে ৩১ জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত কোম্পা্নিগুলোতে উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকরী, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের হালনাগাদ চিত্র উঠে এসেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বস্ত্রখাতে তালিকাভুক্ত ৪৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, ৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেসব কোম্পানিতে চোখে পড়ার মতো নতুন বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, সেগুলো হলো- আনলিমা ইয়ার্ন (৪.৩৯ শতাংশ), ড্রাগন স্যুয়েটার-ডিএসএসএল (৩.৫২ শতাংশ), ইভিন্স টেক্সটাইল-ইটিএল (৩.৪৪ শতাংশ), জাহিন স্পিনিং (৩.২৯ শতাংশ) ও মোজাফ্ফর স্পিনিং (২.০৯ শতাংশ)। এছাড়া, আরও যেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে, সেগুলো হলো-জেনারেশন নেক্সট (১.৩৯ শতাংশ),

হামিদ ফেব্রিক্স (১.৩৭ শতাংশ), সিএন্ডএ টেক্সটাইল (১.১৮ শতাংশ), তাল্লু স্পিনিং (০.৪৩ শতাংশ), এপেক্স স্পিনিং (০.৪২ শতাংশ), এনভয় টেক্সটাইল (০.২৪ শতাংশ), সিএমসি কামাল (০.১৭ শতাংশ), তশরিফা ইন্ডাষ্ট্রিজ (০.১৪ শতাংশ), স্কয়ার টেক্সটাইল (০.০৯ শতাংশ), হাওয়েল টেক্সটাইল (০.০৯ শতাংশ), মতিন স্পিনিং (০.০৬ শতাংশ) ও সায়হাম কটন ( ০.০২ শতাংশ)।

অন্যদিকে, যে ৮টি কোম্পানিতে চোখে পড়ার মতো বিনিয়োগ কমিয়েছে, সেগুলো হলো-প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল (৮.০০ শতাংশ), রিজেন্ট টেক্সটাইল (৫.০৮ শতাংশ), নূরানী ডাইং (৪.৯৫ শতাংশ), সীম টেক্সটাইল (৪.৩৫ শতাংশ), আলহাজ্ব টেক্সটাইল (২.৭৭ শতাংশ), ফারইস্ট নিটিং (২.৬৮ শতাংশ), সায়হাম টেক্সটাইল (২.৫৮ শতাংশ) ও টুংহাই নিটিং (২.৩৬ শতাংশ)।

এছাড়া, আরও যেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে, সেগুলো হলো- পেসিফিক ডেনিম-পিডিএল (১.১৭ শতাংশ), মালেক স্পিনিং (০.৭২ শতাংশ), স্কয়ার টেক্সটাইল (০.০৯ শতাংশ), শেফার্ড টেক্সটাইল (০.৩৯ শতাংশ), রহিম টেক্সটাইল (০.৩৯ শতাংশ), আরগন ডেনিম (০.৬৮ শতাংশ), প্রাইম টেক্সটাইল (০.২৬ শতাংশ), মিথুন স্পিনিং (০.১০ শতাংশ), দেশ গার্মেন্টস (০.০৮ শতাংশ), শাশা ডেনিম (০.০২ শতাংশ), জাহিন টেক্সটাইল (০.০২ শতাংশ)

এ বিষয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “৩০ জুন ডিএসই’র ইনডেক্স ছিল ৫৬৫৬ পয়েন্ট। ৩১ জুলাই ডিএসই ইনডেক্স বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮৬০ পয়েন্টে।এ সময়ে ইনডেক্স ২০৪ পয়েন্ট বাড়লেও বস্ত্রখাতের কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর সেভাবে বাড়েনি।

এছাড়া, আইপিওর অর্থে ইভিন্স টেক্সটাইল, ড্রাগন স্যুয়েটারসহ কয়েকটি কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ার পথে রয়েছে-এসব ইতিবাচক দিক বিবেচনায় বস্ত্রখাতের কয়েকটি কোম্পানিতে আমরা নতুন করে বিনিয়োগ করেছি।”

বস্ত্রখাতের যে ৫টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেশি বেড়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হল:

আনলিমা ইয়ার্ন : ৩০ জুন ২০১৭ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৭.৪৪ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২১০৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৮৩ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ে ৪.৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ৩০ জুন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪৫.৩৪ শতাংশ, যা ৩১ জুলাই কমে দাঁড়ায় ৪০.৯৫ শতাংশে। এ সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার আগের মতো ৪৭.২২ শতাংশ থাকে।

ড্রাগন স্যুয়েটার : ৩০ জুন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৯.৯০ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৩.৪২ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ে ৩.৫২ শতাংশ। অন্যদিকে, এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩৯.৯৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৩৬.৪৭ শতাংশে। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার আগের মতো ৪০.১১ শতাংশ থাকে।

ইভিন্স টেক্সটাইল(ইটিএল): ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১২.৮৯ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২১০৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.৩৩ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ে ৩.৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫০.৪৪ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে। এ সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার আগের মতো ৩৬.৭৭ শতাংশ থাকে।

জাহিন স্পিনিং : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৪.৮৬ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২১০৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৮.১৫ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ে ৩.১৯ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৪৪.০৪ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪০.৭৫ শতাংশে। এ সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার আগের মতো ৩১.১০ শতাংশ থাকে। তবে এক বছর আগে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ছিল ৩৫.২৬ শতাংশ। উদ্যোক্তারা এ সময়ে ৪.১৬ শতাংশ শেয়ার বাজার দরে বিক্রি করেছেন।

মোজাফফর হোসেন স্পিনিং : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৫.৭৯ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২১০৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৭.৯৮ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ে ২.০৯ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩২.৫৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৩০.৪৬ শতাংশে। এ সময়ে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার আগের মতো ৩৯.৪১ শতাংশ থাকে।

অন্যদিকে, বস্ত্রখাতের যে ৮টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে, সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হল:

রিজেন্ট টেক্সটাইল : ৩০ জুন ২০১৭ ইটিএলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৯.৯৬ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ৫.০৮ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ১৪.৮৮ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ২৫.৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০.৩৭ শতাংশে।

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলপিটিএল : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৮.০৫ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ০.০৫ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার কমেছে ৮ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩১.২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৯.২০ শতাংশে দাঁড়ায়।

নূরানী টেক্সটাইল : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২২.৪৪ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১৭.৩০ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ৫.১৪ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩৯.৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪.৫১ শতাংশে।

সিম টেক্সটাইল : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৭.০৭ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১২.৭২ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ৪.৩৫ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৪৮.৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে।

আলহাজ্ব টেক্সটাইল : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১৯.৬৩ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১৬.৮৬ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ২.৭২ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫২.৭৬ শতাংশে।

ফারইস্ট নিটিং : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১১.৮৭ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ৯.১৯ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ২.৬৮ শতাংশ। এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১৭.০৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.৭৬ শতাংশে।

সায়হাম টেক্সটাইল : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩৬.৪৮ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ৩৩.৯০ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক কমেছে ২.৫৮ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩০.৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.১৭ শতাংশে।

টুংহাই নিটিং : ৩০ জুন ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ১০.৭৭ শতাংশ। ৩১ জুলাই ২০১৭ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ৮.৪১ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক কমেছে ২.৩৬ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫৯.১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬১.৫৫ শতাংশে।