Desh-Protikkhon4-1-3দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের ঋণাত্মক মূলধনধারী (Negative Equity) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার সুযোগ আগামি ১৮ আগস্ট শেষ হচ্ছে। মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করে আবারও সময় বাড়ানোর জন্যে আবেদন করেছে ডিএসই, ডিবিএ ও বিএমবিএ।

তবে সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিও অ্যাকাউন্টের ঋণ আগামী এক বছরের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণসহ পুঁজি হারানো অ্যাকাউন্টের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। বিপুল অঙ্কের এ মার্জিন ঋণের কারণে সংকটে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানকে এ পরিকল্পনায় সমাধানের উপায় তুলে ধরতে হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে জানাতে হবে।

রোববার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ ও ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন বার্তা দিয়েছে বিএসইসি। বৈঠকে আরও জানানো হয়, আগামী এক বছরের মধ্যে মার্জিন ঋণের কারণে আর্থিক সংকট মোকাবেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবে, প্রয়োজনে কমিশন সে প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের (বন্ধ করে দেওয়ার) নির্দেশ দেবে।

desh protiklhonসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উভয় সংগঠনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গতকাল প্রথমে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তারা কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে পৃথক বৈঠক করেন। বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও ডিবিএর সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

মার্জিন ঋণ হলো শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহককে (বিনিয়োগকারী) ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের দেওয়া ঋণ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর গত জুন পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩১ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ১০৯ ব্রোকারেজ হাউসের বিতরণ করা মার্জিন ঋণে মূলধনী লোকসানের পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।

এসব বিও হিসাবে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার রয়েছে। সাত বছর ধরে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা স্থগিত করে এসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ দেওয়া হলেও তা খুব বেশি কাজে আসেনি বলে কমিশন কর্মকর্তারা জানান। অন্যদিকে বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে থাকায় বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে সাইফুর রহমান বলেন, মার্জিন ঋণে মূলধনী লোকসান সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। এতে বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কমিশন যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান চায়। সে বার্তাই সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই সমাধান করতে হবে। এ জন্য তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নতুন মূলধন জোগান বা ঋণ অবলোপন করেও তা হতে পারে। সব আইনি শর্ত মেনে আসতে পারলে বন্ড বিক্রি করেও মূলধন সংগ্রহের সুযোগ দিতে আপত্তি নেই কমিশনের বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাইফুর রহমান আরও জানান, মূলধনী লোকসানি হিসাবে লেনদেন করা এবং কিস্তিতে মূলধন সংরক্ষণের সুবিধা আরও কিছুটা সময় বাড়ানো হবে। এ সময় ছয় মাসও হতে পারে, আবার বছরও হতে পারে। তবে আগের মতো বারবার বাড়ানো হবে না। ১৮ আগস্ট মূলধনী লোকসানি বিও হিসাবে লেনদেন করার সুযোগ শেষ হচ্ছে। এর আগেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বৈঠকে আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূলধনী লোকসানি হিসাবে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়ে ছায়েদুর রহমান বলেন, এক বছর আগে মার্জিন ঋণে মূলধনী লোকসান ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এখন তা সাত হাজার কোটি। মূলধনী লোকসানি হিসাবে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ থাকাতেই এটি সম্ভব হয়েছে।

আহমেদ রশীদ লালী বলেন, যে সংকট সাত বছরে সমাধান হয়নি, তা ৭০ বছরেও হবে না। তবে সংকট সমাধানে আরও এক বছর সময় দেওয়ার পক্ষে তিনি।

ডিবিএর পরিচালক মোহাম্মদ আলীর আশঙ্কা, মূলধনী লোকসানি হিসাবে হঠাৎ করে লেনদেনের সুযোগ বন্ধ করে দিলে শেয়ারবাজারের সার্বিক লেনদেন অন্তত ২০ শতাংশ কমবে। মনোস্তাত্ত্বিক ভীতির কারণে তা নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে।