DSE-CSE-logoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে প্রফিট টেকিংয়ের প্রবণতায় শেয়ারের দর কিছুটা কারেকশন হয়েছে। আর এ সংশোধন ছিল বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যাশিত।আর এ সংশোধনের ফলে বাজারের গতি আরো টেকসই হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন । বাজারের এ উঠানামা গতি চলমান থাকলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে আরো বাজারমুখী হয়ে লেনদেন বাড়িয়ে দিবেন।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মাঝেমধ্যে বাজার সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক। বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে সবাই এটাই চেয়েছিলেন। সেজন্য বিনিয়োগকারীরাও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। কেননা টানা উত্থান কিংবা টানা পতন কোনোটাই বাজারের জন্য ভালো নয়। আর উত্থানের বাজারে যেসব সচেতন বিনিয়োগকারী কিছু কিছু শেয়ার বিক্রি করে টাকা বের করেছেন তারাও পরবর্তীতে ক্রয় করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন।

পাশাপাশি অনেকই আজ নতুন করে প্রফিট টেকিং করেছে। তাই আজকের এ পতন অনেক বিনিয়োগকারীর মনেই আস্থার সঞ্চার করেছে। তবে কিছু কিছু হুজুগে বিনিয়োগকারীরা বাজারে উত্থান-পতন থাকা স্বাভাবিক এটা মানতে পারে না। ফলে শেয়ারের দর কমলে দ্রুত তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এটা না করে তাদের ধৈর্য ধারণ করা উচিত।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলেন, বাজারে এখন একধরনের গতি সঞ্চার হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। পুরোনো নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার পাশাপাশি কিছু কিছু নতুন বিনিয়োগও আসছে। একসময় এ বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে ব্যাপক হতাশা ছিল, সেটি এখন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বাজারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে।

এখন এ স্থিতিশীলতাকে টেকসই রূপ দিতে হলে বাজারের গভীরতা বাড়াতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ভালো মানের কোম্পানি ও সচেতন বিনিয়োগকারী। তবে এসময়ে কোন চক্র আবারও বাজার নিয়ে কারসাজি শুরু করতে পারে। কেননা তারা শেয়ারের দর বাড়িয়ে বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যায়। আর শেষ পর্যন্ত এর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। তাই এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে টানা দুদিনের উত্থানের পর আজ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার কিছুটা ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি অনেক বিনিয়োগকারী এক সেক্টরের শেয়ার ছেড়ে অন্য সেক্টরে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন তারা। মূলত নতুন করে শেয়ার ক্রয় করার জন্যই মুনাফায় থাকা শেয়ার সেল করেছেন বিনিয়োগকারীর।

এবং পরবর্তীতে তা দিয়ে আবার বাই দিবেন। যার ফলশ্রুতিতে বাজারে কিছুটা নিন্মমুখী। যা কারেকশন হিসেবেই দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর আগে কয়েক দিনে শেয়ারের দাম বেড়েছে। তাতে কারও কারও মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। যা স্বাভাবিক।

আজকের দুপুরের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। বুধবার দেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘন্টায় সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। আলোচিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা।

আজ দুপুর ১২টায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৯১৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩০৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২১২০ পয়েন্টে। এ সময় লেনদেন হওয়া ৩১৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৪টির, দর কমেছে ১৬৫টির এবং দর অপরিবর্তীত রয়েছে ৪৬টির। এ সময় টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ৩৩৭ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস অর্থাৎ রোববার ১২ টার সময়ে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫৯৩৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.৬৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৩১৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ২১৩১ পয়েন্টে। সে সময় টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ৩২২ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে। এ সময় লেনদেন হওয়া ১৭৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির, দর কমেছে ৯৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার দর। আলোচিত সময়ে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।