dseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের গতিবিধি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। একদিন সূচক বাড়ছে তো লেনদেন কমছে। আবার পরদিন সূচক কমছে তো লেনদেন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন।

পুজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক শ্রেণির বিনিয়োগকারী রয়েছে বাংলাদেশে। কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা অন্য পেশায় থাকলেও পুঁজিবাজার বুঝেন ও সবসময় খোঁজ-খবর রাখেন। তারা নিয়মিত লেনদেন না করলেও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করেন। ক্যাপিটাল গেইনের পাশাপাশি বছর শেষে ডিভিডেন্ড-দুইভাবেই মুনাফা করেন তারা। সংখ্যায় কম হলেও প্রকৃত অর্থে এরাই বিনিয়োগকারী।

আর একটি শ্রেণি রয়েছে, যাদের মূল পেশাই শেয়ার ব্যবসা। এরা প্রতিদিন বাজারে আসেন; নিয়মিত লেনদেন করেন। বাজার তেমন না বুঝলেও অন্যের পরামর্শে এক শেয়ার বিক্রি করে অন্যটা কেনেন। গুজবে কান দিয়ে লেনদেন করেন। বছরের পর বছর ব্যবসা করেও তারা তেমন সুবিধা করতে পারেন না। পুঁজিবাজারে ধস নামলে এই শ্রেণিটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের পুঁজিবাজারে এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি।

আরেক শ্রেণির বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তারা বিভিন্ন কাম্পানির শেয়ার ডিভিশনের কর্মকর্তার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখেন। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগেই জেনে যান তারা। নিশ্চিত খবর পেয়ে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফাও বের করে নেন। সংখ্যায় অল্প হলেও এরা বেশ পেশাদার। এ ব্যবসা করেই এক সময় অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যান। দেশের পুঁজিবাজারে এরাই সবচেয়ে সুবিধাভোগী।

আমানতশাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডে এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলছে। উত্থান-পতন এটা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এতে বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। তাই গুজবে কান না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

দেবাশীষ বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় সবারই খেয়াল রাখা উচিৎ। কোন স্টক থেকে কত শতাংশ মুনাফা নিতে চানবা কত লোকসান হলে শেয়ারটা ছেড়ে দেবেন, সেটা আগেই ঠিক করা উচিত। অতি মুনাফার লোভে প্রলুব্ধ যেন কেউ না হয়ে যায়। কারণ এই লোভে পরেই বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ হয়ে যায়। মুনাফার দিকে যতটা না বেশি নজর থাকবে, তার চেয়ে লোকসান যেন কম হয় সেই দিকটাই বেশি করে খেয়াল রাখা উচিত। তাহলে লাভ একসময় হবেই।

বিনিয়োগকারী মতিউল আলম চৌধুরী সোহেল বলেন, পুঁজিবাজারে মাঝে-মধ্যে ছন্দপতন ঘটলেও পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে রয়েছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে। একইসঙ্গে বর্তমানে বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ার নেই বললেই চলে। যে কারণে এ বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

এই বিনিয়োগকারীর মতে, বর্তমানে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার অনেক কম। সুদ কম হওয়ায় ব্যাংক ছেড়ে পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন অনেকে। কারণ ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশের মাধ্যমেই ব্যাংকের চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর্থিক বছর শেষ না হলেও কিছুদিন ধরে ব্যাংক শেয়ারের দর বাড়ছিলো। ফলে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যাচ্ছে। আবার ব্যাংক খাতের সংশোধনে বাজারে সংশোধন হচ্ছে। বাজার একটি নির্দিষ্ট খাতনির্ভর হয়ে পড়েছে এটা আসলে ঠিক নয়।

ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য খাতকেও ভালো করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট খাতনির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা বাজারের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই বাজারে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে সব খাতের ভালো শেয়ারে বিনিয়াগ করে বাজার চাঙ্গা রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করে কখনোই বাজার অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ অন্য কোম্পানিগুলো যদি ভালো ব্যবসা করে তাহলে ব্যাংকের মানি ফ্লো বাড়বে। ব্যাংকের ব্যবসা ভালো হবে। আর খারাপ করলে ব্যাংকের ব্যবসাও খারাপ হবে।

কাজেই একটি খাতের ওপর নির্ভর করে কখনোই বাজার অগ্রসর হতে পারে না। তাছাড়া সূচক কিন্তু মার্কেটের প্রতিফলন নয়। এটি একটি নির্দেশক, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বাজার কোন দিকে যাচ্ছে। আর বাজারের সূচককে জোর করে ছয় হাজারে নিতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সূচক ছয় হাজার বা তার চেয়েও বেশি অতিক্রম করবে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।

আজকের দুপুরের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও আধা ঘন্টার পর বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘন্টায় সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেনে রয়েছে আগের দিনের তুলনায় কিছুটা ধীর গতি। আলোচিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা।

আজ দুপুর ১২টায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৮৬৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩০৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ০.৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২১১১ পয়েন্টে। এ সময় লেনদেন হওয়া ৩১২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৪টির, দর কমেছে ১৩৭টির এবং দর অপরিবর্তীত রয়েছে ৫১টির। এ সময় টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ২৯৯ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস অর্থাৎ বুধবার ১২ টার সময়ে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৯১৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩০৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২১২০ পয়েন্টে। সে সময় টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ৩৩৭ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ২৩১ পয়েন্টে। এ সময় লেনদেন হওয়া ১৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির, দর কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টি। আলোচিত সময়ে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।