dse-up-dowenদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের গতিবিধি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। একদিন সূচক বাড়ছে তো লেনদেন কমছে। আবার পরদিন সূচক কমছে তো লেনদেন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন। বাজারের এরকম টালমাতাল পরিস্থিতিতে কিছুটা দু:চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বর্তমান বাজার নিয়ে দু:চিন্তায় কোন কারন নেই বলে জানিয়েছেন।

বাজার তার আপন গতিতে চলবে এক্ষেত্রে বাধার কোন কারন নেই।পুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তবে আর্থিক বছর শেষ না হলেও কিছুদিন ধরে ব্যাংক শেয়ারের দর বাড়ছিলো। ফলে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যাচ্ছে। আবার ব্যাংক খাতের সংশোধনে বাজারে সংশোধন হচ্ছে। বাজার একটি নির্দিষ্ট খাতনির্ভর হয়ে পড়েছে এটা আসলে ঠিক নয়।

ব্যাংক ছাড়া অন্যান্য খাতকেও ভালো করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট খাতনির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা বাজারের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই বাজারে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে সব খাতের ভালো শেয়ারে বিনিয়াগ করে বাজার চাঙ্গা রাখতে হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করে কখনোই বাজার অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ অন্য কোম্পানিগুলো যদি ভালো ব্যবসা করে তাহলে ব্যাংকের মানি ফ্লো বাড়বে। ব্যাংকের ব্যবসা ভালো হবে। আর খারাপ করলে ব্যাংকের ব্যবসাও খারাপ হবে।

কাজেই একটি খাতের ওপর নির্ভর করে কখনোই বাজার অগ্রসর হতে পারে না। তাছাড়া সূচক কিন্তু মার্কেটের প্রতিফলন নয়। এটি একটি নির্দেশক, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বাজার কোন দিকে যাচ্ছে। আর বাজারের সূচককে জোর করে ছয় হাজারে নিতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সূচক ছয় হাজার বা তার চেয়েও বেশি অতিক্রম করবে বলেও মনে করছেন ওই বাজার বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও আধা ঘন্টার পর বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘন্টায় সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেনে রয়েছে আগের দিনের তুলনায় কিছুটা ধীর গতি।

desh protiklhonতবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি তারল্য ও আস্থার সংকট কোনটা নেই বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান এক পরিচালক। তিনি বলেন, বাজার অচিরেই স্বাভাবিক গতিতে চলে যাবে। এমনকি ঈদ পরবর্তী বাজারে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াবো। বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। একটি শ্রেনী বাজার নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। এই চক্রটিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দমন করা উচিত।

অন্যদিকে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফার সংকট, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মুনাফার অপ্রতুলতা ও আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিকে লোকসানি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রয়োজন বাজার উন্নয়নে যুগোপযোগী পদক্ষেপ।

বর্তমান বাজার নিয়ে সরকারসহ নীতি নির্ধারকরা বাজার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এরই মধ্যে একটি চক্র বাজারকে অস্থিতিশীলকে করতে কাজ করছে।এই চক্রটি কখনো পুঁজিবাজার ভাল চায় না।

তবে গত কয়েক কার্যদিবস ধরে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে বাজার আগাতে শুরু করলেও লেনদেন একদিন বাড়লে তিনদিন কমছে। সুচকের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনের গতি বাড়তে থাকলে বাজার দ্রুত এগোতে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত লেনদেন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারন গত চার কার্যদিবস ধরে বাজার একটা নিদিষ্ট গতিতে চলছে। এ গতি ধরে রাখতে পারলে বাজার স্বাভাবিক হবে। মূলত একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের কারণেই কিছুটা আস্থার অভাব বিরাজ করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, একশ্রেণীর স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারী আছে যারা বারবার উর্ধমুখী বাজারের সুবিধা নিয়েছে। আবার সুযোগ বুঝে শেয়ার বিক্রি করে নিস্ক্রিয়ও হয়ে গেছে। এ ধরনের স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের কারনেই বাজারে স্বাভাবিক আচরণ স্থায়ী হচ্ছে না।

আর যেহেতু বাজার স্বাভাবিক না হলেও তাদের মুনাফায় ঘাটতি পড়ছে না তাই ইচ্ছে করেই তারা বাজারকে নিম্নমুখী প্রবণতায় রাখতে চাচ্ছে কোন একটি পক্ষ। আর এতে করে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা চিড় ধরেছে।

এদিকে ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে কয়েকবার বাজারে উত্থান প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এর এ উত্থান প্রবণতা দেখে বিনিয়োগকারীরা প্রতিবারই লোকসান কাটনোর প্রত্যাশা করেছেন। অনেকে নতুন করে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের লোকসান কাটানোর চেষ্টাও করেছেন; কিন্তু কিছুদিন বাজার স্থিতিশীলতার আভাষ দিয়ে আবার পতনে রুপ নিয়েছে। সে সময় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমান আরো বেড়েছে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে পুঁজির পাশাপাশি কমেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সীমার বাইরে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত পরিমাণ শেয়ার বাজারে না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মতে, বাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই বহুজাতিক বা বহুজাতিক মালিকানাধীন। কিন্তু কোম্পানিগুলো শেয়ারের চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কারণ কৃত্রিমভাবে বাজার বাড়ানো হলে তা টেকসই হয় না। বিএসইসিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। বাজারে কোনো অনিয়ম হলে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে তিনি মনে করেন।