pic deshprotikhonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে জুনেই বছর শেষ হবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় ১৭৫টি কোম্পানির। ফলে ব্যাংক খাত থেকে বের হয়ে জুন ক্লোজিং শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা! ফলে ব্যাংক খাতের শেয়ারে দরপতনে বৃহস্পতিবার সূচকের অবনতি ঘটে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে জুন ক্লোজিং কোম্পানিতেও। ফলে বাড়ছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। মূল্যসূচক ও বাজারমূলধনে এর প্রভাব পড়ছে।

জানা গেছে, অর্থ আইন অনুসারে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব কোম্পানির জন্য কর বছরের সঙ্গে মিলিয়ে জুনে বছর শেষ করা বাধ্যতামূলক। ফলে এ সময়ের মধ্যে আর্থিক রিপোর্ট তৈরি করে কোম্পানিগুলো।

এরপর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া হয়। এ কারণে জুনের শেষ দিকে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকে। এছাড়া জুন ক্লোজিংয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয় জড়িত। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব কোম্পানির শেয়ারে আন রিয়ালাইজড (অনাদায়ী) লোকসান রয়েছে, মুনাফা থেকে ওই লোকসান সমন্বয় করতে হবে।

ফলে ইচ্ছা করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কৌশলে ৩০ জুন পর্যন্ত শেয়ারের দাম বাড়িয়ে রাখে। কারণ লোকসান কম থাকলে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) কম রাখতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই ইস্যুর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এ কারণে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।

তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। মার্কেট শুরুতে বাই প্রেশার থাকলেও পরে বিক্রয় চাপ দেখা যায়। পরবর্তীতে সেল প্রেশার দেখা গেছে বেশি পরিমাণ। ফলে মার্কেটে অন্যান্য খাতে তেমন বাই ভলিউম দেখা যায় নি।

অনেক শেয়ার দর হালকা কমেছে বাজারে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। অন্যান্য খাতের চেয়ে ক্যাশ ফ্লো এবং ট্রেড ভলিউম উভয়ই বেড়েছে। লেনদেনের ভিত্তিতে দেখলে আজকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল প্রকৌশল খাত এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাত। তুলনামুলক ভাবে মার্কেটের বাকি খাতগুলোর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে উভয় খাতেই। বলা যেতে পারে যে বিনিয়োগকারীরা এই খাতগুলোতে ট্রেড বেশি করছে।

ব্যাংকিং খাত: লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে অবস্থানে দিন শেষ করেছে। মোট লেনদেনের পরিমান ছিল ২০৯.৯ কোটি টাকা যা আগের দিনের তুলনায়  ৩৩.৪০ কোটি টাকার মত কম। বিগত দিনের চেয়ে আজকে এই খাতে লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ১৩.৭৩%। মোট লেনদেনে এই খাতের অবদান ছিল ২৫.৫২%। লেনদেন হওয়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১টির এবং কমেছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

সর্বাধিক বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার ছিল রুপালী ব্যাংকের যা দিন শেষে ৬০.১ টাকায় লেনদেন সমাপ্ত করে। আগের দিনের তুলনায় কোম্পানিটির দাম প্রায় ১.৩৫% বেশি। এই খাতে কোন কোম্পানির দাম হ্রাস পায় নি।

প্রকৌশল খাত:  প্রকৌশল খাত আজকে দ্বিতীয় অবস্থানে দিন শেষ করেছে। প্রকৌশল খাতে মোট লেনদেনের পরিমান ছিল ১২৪.৪ কোটি টাকার মত যা আগের দিনের তুলনায়  ৪ কোটি টাকা বেশি। বিগত দিনের চেয়ে আজকে এই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৩২%। অন্যদিকে এই খাতে সর্বাধিক হ্রাস পাওয়া শেয়ার ছিল ইস্টার্ন ব্যাংকের যা ৪২.৫ টাকায় লেনদেন সমাপ্ত করে  যা আগের দিনের তুলনায় ৪.২৮% কম। এই খাতে লেনদেন হওয়া ৩৪ টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ২০টি ,কমেছে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং অপরিবর্তিত ছিল ২টি কোম্পানির দাম।

এই খাতে সর্বাধিক বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার ছিল সুহৃদ লিমিটেডের। এই কোম্পানির শেয়ার প্রতি ১৪.৭  টাকায় লেনদেন সমাপ্ত করে যা আগের দিনের তুলনায় ৯.৭% বেশি। অন্যদিকে এই খাতে সর্বাধিক হ্রাস পাওয়া শেয়ার ছিল ইফাদ অটোস প্রতিষ্ঠানের যা ১৬১.২ টাকায় লেনদেন সমাপ্ত করে  যা আগের দিনের তুলনায় ১.৬৫% কম।

ফার্মাসিউটিক্যাল খাত: লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে আছে ফারমাসিউটিক্যাল খাত। এই  খাতে আজকে মোট  লেনদেনের পরিমান ছিল ১১১.৩ কোটি টাকা যা আগের দিনের তুলনায় ৪৬.৮০ কোটি টাকার মত বেশি। বিগত দিনের চেয়ে আজকে এই খাতে লেনদেন বেড়েছে ৭২.৫৬%। মোট লেনদেনে এই খাতের অবদান ছিল ১৩.৮৩%।

এই খাতে লেনদেন হওয়া ২৮টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১৬টি এবং কমেছে ৯টি কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

সর্বাধিক বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার ছিল ইবনে সিনা যা আজকে ২৭৫.৩ টাকায় লেনদেন সমাপ্ত করে যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৮.৬% বেশি। অন্যদিকে এই খাতে সর্বাধিক হ্রাস পাওয়া শেয়ার ছিল ইমাম বাটন যেটা আজকে ১৮.২ টাকায় লেনদেন শেষ করে যা আগের দিনের তুলনায় ৩.৭% কম।