gphousebg20160802102547দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় নিট ৫৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির কারণে যে পরিমাণ ডিভিডেন্ড বিতরণ (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যাতিত) করেছে, তার চেয়ে এই পরিমাণ বেশি কর সুবিধা পেয়েছে। ফলে উন্নয়নের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের আনা হলেও রাজস্ব আয় কমছে সরকারের।

জানা গেছে, ১ হাজার ২১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের গ্রামীণফোন প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০টি ও প্লেসমেন্টে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ইস্যু করে। অর্থাত মোট শেয়ার ইস্যু করে ১৩ কোটি ৫১ লাখ ২৫ হাজার ২০০টি। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ বা ১২১ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৮২২টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোন ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ৯৬.৫ টাকার ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যাতে এই ৭ বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড পেয়েছে।

অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় কোম্পানিটিকে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার কারনে নিট ৫৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাষ্ট্র একই পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

কোম্পানিটি ১০ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড এবং কর সুবিধায় ৫৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার পার্থক্য হয়েছে। তবে কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ১৫৫টি বা ১৪.৪২ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করলে এ পার্থক্য শূণ্য হতো। কারণ ১৪.৪২ শতাংশ শেয়ার ধারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা লভ্যাংশ পাবে।

কোম্পানিটি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ৯৬.৫ টাকা করে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পেয়েছেন ১১ হাজার ৭২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার লভ্যাংশ।

এদিকে, গ্রামীণফোন এই সময়ে কর পূর্ব আয় করেছে ২০ হাজার ৫৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ হিসেবে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া ভালো ডিভিডেন্ড দি”েছ ও শেয়ার দর ভালো। তবে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ভালো।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেছেন, ‘১০ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোনো বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত না। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত। অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেওয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।’

এদিকে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসা ও না আসা সমান কথা বলে জানান শাকিল রিজভী। তার মতে, যদি পুঁজিবাজারে সাপ্লাই না বাড়ে তাহলে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ নেই। এ ছাড়া নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে শেয়ার দর নিয়ে অল্পতে কারসাজি করা সহজ হয়ে উঠে।

এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) বলেছেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা নিচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হলেও কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো উচিত।’

এ বিষয়ে গ্রামীনফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি পুঁজিবাজারকে আরো সংহত করতে গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গ্রামীণফোনের সাফল্যের অংশীদার হতে পারছে।