share-lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডিএসই সূচক ৬ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে বাজার নিম্নমুখী হলে আতঙ্কের কিছু নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ঈদ পরবর্তী বাজারে যে লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবো বলে মনে করছেন তারা। আগামীতে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে। ঈদ পরবর্তী লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে বাজার কারেকশনও হলে এটা নিয়ে আতঙ্কের  কিছু নেই। তবে ছোট ছোট কারেকশন হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও ড. মোশাররফ হোসেন আজ এসব কথা বলেন।

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আলোচনায় মোশাররফ হোসেন বলেন, বাজারে মানি ফ্লো বেড়েছে এবং বাড়ছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি সূচক ৬ হাজার অতিক্রম করবো। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোতে বাজার পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও ভালো হবে।

পলিসি পরিবর্তন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বাজার উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণে কমিশনের রুলস-রেগুলেশন তেমন শক্তিশালী ছিল না। তাছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও তেমন সচেতন ছিলেন না।

দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বাজারের সেই পরিস্থিতি এখন নেই। বিনিয়োগকারীরা যথেষ্ট সচেতন। বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়নে ইতোমধ্যে কমিশনের যথেষ্ট শক্তিশালী রুলস তৈরি হয়েছে। তাছাড়া মিডিয়াও এখন যথেষ্ট সচেতন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, খারাপ কোন কোম্পানি বাজারে আসার আলোচনা শুরু হলেই মিডিয়া তা প্রচার করছে। মিডিয়া কোম্পানির খারাপ দিকগুলো তুলে ধরছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই সচেতন হয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার এই ভূমিকা বাজারের জন্য বড় একটি ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।

এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারের নানামূখী বাস্তব পদক্ষেপ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা আরো এগিয়ে এলে আমাদের দেশের তরুণরা পুঁজিবাবাজার বা স্টক মার্কেটকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। এক সময়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবতায় ফিরে আসবে বলে মনে করেন মোশারফ হোসেন।

এদিকে সম্প্রতি নেগেটিভ ইক্যুইটির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিলো। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই আশঙ্কাকে দূর করে বিনিয়োগকারীদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তাই রোববার সুখবর দিয়েই চলতি সপ্তাহের বাজার শুরু হচ্ছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহের ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২ দিনই কমেছে সূচক। আর পতনের মাত্রা ছিলো অত্যাধিক। তাই গত সপ্তাহে (১৩-১৭ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচক কমেছে। যার পরিপেক্ষিতে সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সব ধরনের সূচকের পাশাপাশি লেনদেনের পারিমাণও কমেছে।

ফলে ডিএসই সূচক ৬ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে আবার নিম্নমুখী হয়। পাশাপাশি গত সপ্তাহে এমন ভীতির পেছনে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ঋণাত্মক মূলধনধারী (Negative Equity) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার সময়সীমার বিষয়টি কাজ করেছে। ফলশ্রুতিতে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী ছিল।তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে বাজার অনেক ইতিবাচক মনে হচ্ছে। এখন ৬ হাজার পয়েন্টের ‘মনস্তাত্ত্বিক সীমা’ পার করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কেননা আরও এক বছর লেনদেনের সময় পেল পুঁজিবাজারের ঋণাত্মক মূলধনধারী (Negative Equity) বিনিয়োগ হিসাবগুলো। শেয়ার কেনা-বেচার প্রান্তিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্তে ১ বছর ৩ মাস সময় বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা বাজারের স্বচ্ছতা আরও বাড়াবে। পাশাপাশি ওই সমস্ত বিনিয়োগকারীরাও বাজারে তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াবে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার ইতিবাচক দিকে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ দেশের পুঁজিবাজার ইনডেক্স ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার হতে পারে। এ নিয়ে দু:চিন্তায় কিছু নেই। বিনিয়োগকারীরা বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কারণ কৃত্রিমভাবে বাজার বাড়ানো হলে তা টেকসই হয় না। বিএসইসিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। বাজারে কোনো অনিয়ম হলে তা চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে তিনি মনে করেন।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি তারল্য ও আস্থার সংকট কোনটা নেই বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাজার অচিরেই স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে। ঈদ পরবর্তী বাজারে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। বর্তমান বাজার নিয়ে সরকারসহ নীতি নির্ধারকরা নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ায় বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পথে এগুচ্ছে। এরই মধ্যে একটি চক্র বাজারকে অস্থিতিশীলকে করতে কাজ করছে। এই চক্রটি কখনো পুঁজিবাজার ভাল চায় না। এই চক্রটিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দমন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

বাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত লেনদেন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ গত চার কার্যদিবস ধরে বাজার একটা নিদিষ্ট গতিতে চলছে। এ গতি ধরে রাখতে পারলে বাজার স্বাভাবিক হবে। মূলত একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের কারণেই কিছুটা আস্থার অভাব বিরাজ করছে বলে মনে করছেন তিনি।