bsccl lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের মুনাফা বাড়লে ডিভিডেন্ড বাড়েনি। ফলে ঘোষিত ডিভিডেন্ডে স্বস্তি ফিরেনি বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানির কাছ থেকে আরো ভাল ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করেছিলেন।

ভারতের বাজারে ব্যান্ডউইডথ রফতানি, স্থানীয় কোম্পানিতে আইপিএলসি (ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজ সার্কিট) ভাড়া বৃদ্ধি ও আইপি ট্রানজিট সার্ভিসে সফলতা পাওয়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল)। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার করপরবর্তী মুনাফা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটির, আগের বছর যা ছিল ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়।

আজ বিএসসিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে এর পর্ষদ।

কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, সাবমেরিন কেবলে টেকনিক্যাল সমস্যা হলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একটা সময় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি নির্ভর ছিল। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসায় স্থানীয় পর্যায়ে আইপিএলসি বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি ভারতের বাজারে ব্যান্ডউইডথ রফতানি শুরু হওয়ায় মুনাফা বেড়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল চালু হওয়ায় কোম্পানির মোট বিক্রিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ হিসাব বছরে সাবমেরিন কেবলের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৯৩ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা। ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩৬ টাকা ৪৪ পয়সা, ২০১৬ সালের ৩০ জুন যা ছিল ৩৩ টাকা ৯৫ পয়সা। শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফ) দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ৭৬ পয়সা।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনে আগামী ৭ অক্টোবর পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অবস্থিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করবে কোম্পানিটি। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারিত হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর।

এদিকে ভারতে রফতানি শুরু করার পর মিয়ানমার, ভুটান ও কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশে ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্লুবেরি টেলিকম প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি কোম্পানি গঠন করেছে বিএসসিসিএল। কোম্পানিটির ১০ শতাংশ মালিকানা থাকবে সরকারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির হাতে। কোম্পানিটি আশা করছে, এ অবকাঠামো থেকে বিএসসিসিএল বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করতে পারবে। এর বাইরে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে বছরে অন্তত ১২ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

অবকাঠামো প্রকল্প সম্পর্কে তারা জানান, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমেরিন কেবল লাইনটি কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের বন্দরনগরী সিত্তি পর্যন্ত যাবে। এতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। কেবল স্থাপনের কাজটি শেষ হতে অন্তত ছয়মাস সময় লাগবে। এ কেবলের মাধ্যমে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রফতানি কিনবে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও ভুটান।

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারই চুক্তিকৃত ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করবে। পরবর্তীতে তা মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া মিলে ব্যবহার করবে।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সুবাদে বিএসসিসিএলের সক্ষমতা ২০০ থেকে প্রায় দেড় হাজার জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় স্থানীয় বাজারে প্রথম সাবমেরিন কেবলের পূর্ণ সক্ষমতারও সদ্ব্যবহার করতে পারছে না কোম্পানিটি। ভবিষ্যত্ চাহিদার কথা মাথায় রেখে সংযোজিত অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ রফতানির মাধ্যমে কোম্পানির আয় বাড়ানোর নীতিগত অবস্থান নিয়েছে সরকারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।

বিএসসিসিএল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাজারে ১০জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রফতানি করছে, যেখান থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

ডিএসইতে সর্বশেষ ১১৮ টাকা ৩০ পয়সায় বিএসসিসিএলের শেয়ার হাতবদল হয়। গত একবছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ১০৭ টাকা ও সর্বোচ্চ দর ছিল ১৩৫ টাকা ৯০ পয়সা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬ হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল বিএসসিসিএল।

২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসসিসিএলের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৬৪ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানির রিজার্ভ আছে ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ার ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার ৫১০টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১২ দশমিক ২০, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২ দশমিক শূন্য ১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার।