share-lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল না অস্থিতিশীল এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। গত তিন কার্যদিবসের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার নিয়ে নানা প্রশ্ন জাগছে। তবে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার মতো কোন কারন নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

কারন নানা চড়াই পেরিয়ে বিপর্যয়ের ধারা কাটিয়ে অনেকটাই স্থিতিশীলতার পথে হাটছে দেশের পুঁজিবাজার। চলতি বছরের শুরু থেকেই ছোট খাটো কারেকশনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন, বাজার মূলধন ও সূচকের পরিমাণ বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ফিরে আসতে শুরু করেছে।

বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে সরকারের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষনে বিএসইসির একাধিক সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বাজারমুখী হচ্ছেন। এছাড়া পুঁজিবাজারের স্টেক হোল্ডারদের সক্রিয়তাও পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে বর্তমানে এ স্থিতিশীলতা ধরে রাখাটাই পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

মাঝে মধ্যে একটু সুচকের কারেকশন হলেও বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। কারন একটানা দরবৃদ্ধির পর একটু কারেকশন হতে পারে। আর এ কারেকশন বাজারে শেয়ার কেনার উত্তম সময় বলে তারা মনে করছেন। দেশের উভয় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।

এ নিয়ে উভয় বাজারে পর পর তিন কার্যদিবস বড় দরপতন হলো। রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের (বৃহস্পতিবার) তুলনায় কমেছে ৪১ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার এই সূচকটি কমেছিল ২২ পয়েন্ট এবং তার আগের কার্যদিবসে কমেছিল ৩৮ পয়েন্ট। তিন কার্যদিবসে ডিএসইএক্স কমেছে ১০১ পয়েন্ট।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার সিএসইতে এ সূচকটি কমেছিল ৪০ পয়েন্ট এবং তার আগের দিন ৬৮ পয়েন্ট। তিন কার্যদিবসে সিএসসিএক্সকমেছে ১৮৩ পয়েন্ট।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার সূচকের বড় উত্থানে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম ২০ মিনিটেই ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে বেলা ১১টার পর থেকে নিম্নমুখী হতে থাকে সূচক। যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে সূচকের বড় উত্থানে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হলেও শেষ হয় বড় পতনে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৯ পয়েন্টে। এদিন প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে অপর দুই সূচকও।

রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান আইসিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ইতিবাচক। বাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারন নেই। গত কয়েকদিন আইসিবি কেনাবেচায় ছিল প্রায় সমান সমান। তবে তিনি আভাস দেন, আগামীকাল থেকে আইসিবি ‘বাই মুডে’ থাকবে।’

এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নুরুল আজম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে দু:চিন্তার কোন কারন নেই। বাজার বাড়ার পর একটু কারেকশন হলে বাজার টেকিই ও স্থিতিশীল হয়। তাছাড়া পুঁজিবাজারের বর্তমান পতন সাময়িক। এর পেছনে বড় ধরণের কোন কারণ নেই। দু’এক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

ডিএসইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালি বলেছেন, পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারন যারা প্যানিক হয়ে সেল দিয়েছে তারা একেবারেই না বুঝে এই কাজটি করেছে। বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। একটানা দর বাড়লেও তো একটু কারেকশন হতে পারে। এ নিয়ে দু:চিন্তায় কোন কারন নেই।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার ওঠানামা করবে এটা পুঁজিবাজারের ধর্ম যারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিনিয়োগ করবে তারাই লাভবান হবে। ১৯৮৭ সালের দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুঁজিবাজারের বিষয়ে তেমন ধারণা ছিল না। মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে পুঁজিবাজার সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পুঁজিবাজার অনেক বড় হয়েছে, তেমনি বিস্তৃতি ঘটছে। সুতারাং বাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ না। তবে এক্ষেত্রে বাজারকে অস্থিতিশীল করে এমন বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে তার ব্যবস্থা নিতে পারে। কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম বন্ধে বিএসইসিকে মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে।

বিভিন্ন অনিয়মের শাস্তি প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনিয়মের আকার বিবেচনা করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার কিছু কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে শুধু নামমাত্র জরিমানা করলেই চলবে না। প্রয়োজনে অপরাধী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরো কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।