block marketফয়সাল মেহেদী, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সুবিধাভোগী ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের মধ্যদিয়ে বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে নতুন বিনিয়োগে।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি সময়ে কারসাজির হাতিয়ার হয় উঠেছে ‘ব্লক মার্কেট’। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তথ্য গোপন করেই ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করছে। তাও আবার সাধারণ মার্কেটের বাজার মূল্যের নিচে বিক্রি হচ্ছে শেয়ার।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা পরিচালকারই রাজস্ব ফাঁকি দিতে কম মূল্যে শেয়ার হস্তান্তর করছে। এছাড়াও সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের পূর্বে ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানিগুলো তা মানছে না।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, আইন লঙ্ঘন করে ঘোষণা ছাড়াই ‘ব্লক মার্কেটে’ শেয়ার লেনদেন করছে ফ্যামিলিটেক্স লিমিটেড। মাত্র দুই কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের এ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা সাড়ে ২৩ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার লেনদেন করেছেন।

এছাড়াও ভ্রমন ও অবকাশ খাতের দ্য পেনিনসুলা চিটাগংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ জুন ২০১৬ সালে ৫১.৬৭ শতাংশ শেয়ার থাকলেও বর্তমানে ৩৮.৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কোম্পানিটি শেয়ার বিক্রির কোনো ঘোষণা দেয় নি।

এদিকে, মর্ডান ডাইংয়ের উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০ জুন ২০১৬ সালে ৬৮.৬৯ শতাংশ শেয়ার থাকলেও বর্তমানে ৬৪.৯৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটিও শেয়ার ক্রয় বা বিক্রির কোনো ঘোষণা দেয় নি। এভাবেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের নাকের ডগার উপর বসে ব্লক মার্কেটে ঘোষণা বিহীনভাবে শেয়ার বিক্রি করছে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, গত দুই কার্যদিবসে ফ্যামিলিটেক্সের ২ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার ১৭৬টি শেয়ার ‘ব্লক মার্কেট’ লেনদেন হয়েছে।

লেনদেন হওয়া এই শেয়ারগুলোর বাজারদর ছিল ২৩ কোটি ৫০ লাখ ৭১ হাজার ৫২৫ টাকা। এর মধ্যে ২০ আগস্ট ‘ব্লক মার্কেটে’ ফ্যামিলিটেক্সের ২ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার দর ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর গতকাল (২১ আগস্ট) ‘ব্লক মার্কেটে’ এই কোম্পানির ৯০ লাখ ২১ হাজার ১৭৬টি শেয়ার ৭ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া শেয়ারগুলো দুই দিনে একবার করে হাতবদল হয়েছে।

এদিকে দুইদিন ধরে ‘ব্লক মার্কেটে’ কোম্পানিটির ২৩ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার হাতবদল হলেও এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। তবে আইন অনুযায়ী, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের ধারণ করা শেয়ার লেনদেন করতে চাইলে অগ্রীম ঘোষণা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, ব্লক মার্কেটে আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতা ঠিক করা থাকে। শেয়ারের দরও আগে থেকে ঠিক করে নেন ক্রেতা-বিক্রেতা।

দেখা গেছে, ‘ব্লক মার্কেটে’ বাজারদরের চেয়ে কম দরে ফ্যামিলিটেক্সের শেয়ার লেনদেন করা হয়েছে। ডিএসই’র সাধারণ বাজারে এই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার গতকাল ৯ টাকা থেকে ৯ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হয়। আর ‘ব্লক মার্কেটে’ প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয় ৮.১০ টাকা দরে। গতকাল সাধারণ বাজারে এই কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৮.৮৯ শতাংশ বা ০.৮০ টাকা। এদিন শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯.৮০ টাকা দরে।

এদিকে ফ্যামিলিটেক্সের মালিকানা পরিবর্তনের গুজব চলছে বাজারে। ‘ব্লক মার্কেটে’ বাজারের চেয়ে কম দরে শেয়ারের হাতবদলকে তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে নিশ্চিত না করায় এখন পর্যন্ত মালিকানা বদলের তথ্যটিকে গুজব বলেই মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বস্ত্র খাতের কোম্পানি ফ্যামিলিটেক্স। আইপিওতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ১০ টাকা অভিহিত দরে। তবে বর্তমানে শেয়ারটি লেনদেন হচ্ছে অভিহিত দরের নিচে।

তালিকাভুক্তির পর প্রথম বছর শতভাগ ডিভিডেন্ড দিলেও পরবর্তীতে ডিভিডেন্ডের হার কমতে থাকে। সর্বশেষ ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে জন্য কোম্পানিটি মাত্র ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর যাবত পুঁজিবাজার নিযন্ত্রক সংস্থার সংস্কারমূলক কার্যক্রমে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে যদি কোম্পানিগুলোর কারসাজি ঠেকানো না যায় তবে বাজারে বড় ধরণের বিপত্তি নেমে আসতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখতে হবে।