bsec lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বহুল আলোচিত ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথি আজ পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের উপস্থাপন করা হবে। আসামিদের মধ্যে দুই জনের বিচারকার্য শুরু করার লক্ষ্যেই মূলত মামলাটির নথী উপস্থানের জন্য এইদিন পূর্বনির্ধারিত রয়েছে।

সম্প্রতি এই মামলার অভিযোগ থেকে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের পাশাপাশি অপর দুই আসামিকে বেকসুর খালাস বা অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের দীর্ঘদিনের স্থগিতাদেশ শেষে গত ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে এ মামলার দুই আসামি- প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান ও পরিচালক আনু জায়গীরদারের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিলো।

তবে ওই নির্ধারিত দিনে তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। এদিকে ৯ আগস্ট আসামিরা গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ। আর মামলাটির বিচারকার্য পরিচালনার লক্ষ্যে নথী উপস্থাপনের জন্য ২৪ আগস্ট দিন বহাল রাখা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ বা বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার নথী উপস্থাপনের জন্য ২৪ আগস্ট পূর্বনির্ধারিত রয়েছে। নথী পর্যালোচনা করে মামলার আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকার্যের বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন মহামান্য ট্রাইব্যুনাল।

শেয়ার কেলেঙ্কারির বহুল আলোচিত এ মামলায় মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারসহ ব্যক্তি আসামি ছিলেন মোট চারজন। এদের মধ্যে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান (বর্তমানে র‌্যাংগস গ্রæপের চেয়ারম্যান) এম এ রউফ চৌধুরী এবং পরিচালক (বর্তমানে এইচআরসি গ্রæপ ও বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান) সাঈদ এইচ চৌধুরীকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস বা অব্যাহতি বা দেওয়া হয়।

এদিকে মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রাখা হয়। গত বছরের ১৭ এপ্রিল এ দুই আসামীর বিচার কাজে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। পরবর্তীতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ ফের ছয় মাস বাড়ানো হয়।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি এ দুই আসামি উচ্চ আদালতের বর্ধিত স্থগিতাদেশের কপি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। গত বছরের ২ নভেম্বর শুরু হওয়া বর্ধিত ওই স্থগিতাদেশ চলতি বছরের ২ মে শেষ হয়। ফলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফের মামলাটির বিচারকার্য শুরু হয়।

মামলার নথী সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।

এ সময় ১ নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এ সব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত।

আসামীদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর তদন্ত প্রতিবেদনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২১ ধারা মেনে শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর মামলাটিতে বাদী হন কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশিদ খান। মামলায় প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ, এম এ রউফ চৌধুরী, মশিউর রহমান, আনু জাগিরদার ও সাঈদ এইচ চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়।

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ২৬ জুলাই এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যার মামলা নং-২/২০১৫ (দা: ৩৫৯৮/৯৯)। আর বাদীসহ এ মামলায় সাক্ষ্য দেন ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর,

তদন্ত কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এটিএম জহুরুল হক, বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মনিরউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক জহিরুল হক।