pmগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার থাকাকালীন গত ৩১ জানুয়ারি, ২০১২ ইং তারিখে জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপস্থাপিত হয় এবং অনেক সংসদ সদস্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার পক্ষে মতামত দেন।

বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী ২০১৫-১৬ বাজেট অধিবেশনে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নবম সংসদ থেকে শুরু করে দশম সংসদের সর্বোশেষ অধীবেশন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সুপারিশ করেছিলেন।

পরে নবম জাতীয় সংসদের অন্তিম সময় মহাজোট সরকারের শেষ চমক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক নির্দেশনার বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় খবর বের হয়। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে দেশের বহু বিশিষ্টজন কলাম লিখেছেন; লিখছেন। জাতীয় পত্রিকাগুলোর চিঠিপত্র কলামে প্রায়শই এ বিষয়ে লেখা ছাপা হচ্ছে।

বর্তমান সরকাররের আমলে গত ৮ জুন, ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকগণ সমর্থন দিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ২০১১ অধ্যাদেশ মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে।

কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এতসবের পরো কোনো এক অজানা কারণে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত ছাত্রদের প্রাণের দাবি-চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোরÑ আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

আমরা স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্ম এখনো আশাবাদী আমাদের এই যৌক্তিক দাবি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। আর এই আশাই আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখার শক্তি ও সাহস জোগায়। হতাশার মধ্যে স্বপ্ন দেখায় বলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে যুক্তিসহ খোলা চিঠি পেশ করা হলো :

উন্নত বিশ্ব তাদের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমা রেখা নির্দিষ্ট করে রাখেনি। পাশের দেশসহ উন্নত দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।

যেমন : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়া ৩৫, ইতালি ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্স ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করতে পারে। রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনি¤œ ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়; ২. প্রাথমিকপর্যায়ে ভর্তি হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬+(ছয়) বছর করা হয়েছে।

ফলে আগে যেখানে একজন ছাত্র ১৪-১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাস করতে পারত এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনোক্রমেই সম্ভবপর নয়; ¯œাতক ও সম্মান উভয় ক্ষেত্রে লেখাপড়ার সময় ১ (এক) বছর করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ (তিন) ও ৪ (চার) বছর করা হয়েছে; ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছিল এই বলে যে, তাদের সাধারণদের চেয়ে এক বছর বেশি অর্থাৎ চার বছর অধ্যায়ন করতে হয়।

পরে সাধারণদের ¯œাতক ও সম্মান উভয়পর্যায়ে সময় এক বছর বৃদ্ধি করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি;এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স/ডিগ্রি ও মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হওয়ার মধ্যবর্তী সময় নষ্ট হয় সব মিলিয়ে প্রায় দুই বছর;

নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৬ বছরে উন্নীত করা হয়েছে; সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে; নিয়োগ প্রক্রিয়াসম্পন্ন হওয়া উচিত যোগ্যতার ভিত্তিতে, যোগ্যতার সাথে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই; ১৩. ৫৭ বছরের বৃদ্ধের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু বাড়লে ৩০ বছরের যুবকের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু কমে না তা প্রমাণ করতে; সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সাথে সরকারের কোনো প্রকার আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই।

কিন্তু সিদ্ধান্তটি হবে জনমুখী। ফলে উপকৃত হবে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও তাদের পরিবার এবং সর্বোপরি দেশ। তাই, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মহান জাতীয় সংসদের তৎকালীন মাননীয় স্পিকার গত ৩১ জানুয়ারি, ২০১২ ইং তারিখে জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার যে প্রস্তাব করেছিলেন তা বাস্তবায়নের মাধ্যম দেশের উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের দেশ সেবার সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ রইল।

বিনীত
ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয় বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের,
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।