paramount-textileদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড ত্রুটিমুক্ত উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে । এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি গত দুই বছরে ১৩ দফায় মূলধনী যন্ত্রপাতি করেছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, খুব শিগগিরই এর সুফল পাবেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। কারণ, এসব যন্ত্রপাতি আমদানি ও সংস্থাপনের কাজ শেষ হলে কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১৩ দফায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঘোষণা দিয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলে পরিচালনা পর্ষদ। যা দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

ডিএসই’র তথ্যানুযায়ী, কোম্পানিটি ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর ৭ হাজার ৬৫০ ইউএস ডলার ব্যয়ে চায়না/ভিয়েতনাম থেকে সুইং মেশিন আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ১৫ নভেম্বর ৪৬ হাজার ৯৫৬ ডলার ব্যয়ে চায়না থেকে ১টি গ্রে ইন্সপেকশন মেশিন এবং ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারে কুরিয়া থেকে ১টি সেকশনাল ওয়ার্পিং মেশিন, ৭ ডিসেম্বর ইটালি ও জার্মানী থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ইউরো ব্যয়ে ২টি মেশিন (ডাবল ড্রাম রাইজিং মেশিন, ওয়্যাফ্ট স্ট্রেইথনার অর্থপ্যাক),

২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চায়না থেকে ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৯৫ ডলার ব্যয়ে ৩টি মেশিন (সফট উইন্ডিং অ্যান্ড রি-উইন্ডিং মেশিন, গ্রে ইন্সপেকশন ও ফাইনাল ইন্সপেকশন মেশিন), ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি ২,৮০ হাজার ডলার ব্যয়ে ২টি মেশিন (টুইস্টিং মেশিন ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেশিন), ৬ জুন ৪,৪৫ হাজার ডলার ব্যয়ে বায়োকেমিক্যাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য বিভিন্ন মেশিনারিজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়া একই বছরের ২৪ জুলাই ৩ লাখ ২৭ হাজার ডলার ব্যয়ে লো ভল্টেজ সিস্টেম এবং বাবসার ট্রাঙ্কিং সিস্টেম, ২ আগস্ট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অস্ট্রিয়া থেকে ৭ লাখ ২১ হাজার ইউরো ব্যয়ে ২টি প্রিন্টিং মেশিন, ৭ সেপ্টেম্বর উৎপাদন বাড়ানো ও কমপ্লায়েন্স পরিপালনের জন্য ৫ লাখ ৪৭ হাজার ইউরো এবং ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যয়ে ৪টি নতুন মেশিন, ২৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ব্যয়ে চায়না থেকে ১টি আফটার প্রিন্টেড ওয়াশিং মেশিন ড্রায়ার সিলিন্ডারসহ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। সবশেষে চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল মাসেও দু দফা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।

ঘন ঘন এতো মেশিনারিজ আমদানির কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক আবদুল হালিম জানান, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় বদ্ধ পরিকর। মূলত, কোম্পানির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা বিগত সময়ে এসব মেশিনারিজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এতে কোম্পানির উৎপাদন কেমন বাড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় আড়াই কোটি ইয়ার্ডস। যদি সব যন্ত্রপাতি আমদানি ও সংস্থাপনের কাজ শেষ হয়, তবে আশা করছি বছর শেষে তা ৩ কোটিতে দাঁড়াবে।

এদিকে সম্প্রতি প্যরামাউন্ট টেক্সটাইল জয়েন্ট ভেঞ্চারে পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুমোদন পেলেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করবে কোম্পানিটি।

জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কোম্পানিটি ‘প্যারামাউন্ট-এগ্রিটেক এনার্জি কনসোর্টিয়াম’ নামে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিপি) অনুমতি পেলেই বাঘাবাড়িতে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, আলোচিত কনসোর্টিয়ামের অপর তিন সদস্য হচ্ছে- প্যারামাউন্ট স্পিনিং, প্যারামাউন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড ও এগ্রিটেক এজি। ঘোষণা অনুসারে, কনসোর্টিয়ামে পিটিএলের অংশ থাকবে ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, গত ২ জুলাই ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, পিটিএলের পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্পের (First Track Project) ওতায় ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আইপিপি/রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আবেদন করবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও ঠাকুরগাঁও এর শান্তাহারে তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী। তবে দেশের অন্য কোনো এলাকায় হলেও আপত্তি থাকবে না।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে দরপত্র ছাড়াই কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই কোম্পানিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি চেয়ে বিপিডিবির কাছে আবেদন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য আবেদন করেছি। এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আমাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে যদি আমাদেরকে যোগ্য মনে করেন, তবে অনুমোদন দিবেন।

উল্লেখ্য, ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটি ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১০ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ বোনাসসহ মোট ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৪২ পয়সা।

২০১৫ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইপিএস হয়েছিল ১ টাকা ৭৭ পয়সা এবং এনএভি ছিল ২১ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল যথাক্রমে ২ টাকা ২৩ পয়সা ও ২২ টাকা ৩৬ পয়সা। কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, যা আগের বছর মুনাফা ছিল ১৮ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

গতকাল কোম্পানিটির ৪ কোটি ১৩ লাখ ১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দিনজুড়ে ১১ লাখ ৯১ হাজার ১৭৭টি শেয়ার মোট ৪৬৪ বার হাতবদল হয়। শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের চেয়ে ০.৫৮ শতাংশ বা ২ পয়সা বেড়ে সর্বশেষ ৩৪.৪০ টাকায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ৩৪.৭০ টাকা। শেয়ারদর সর্বনিম্ন ৩৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায় হাতবদল হয়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৬.৭০ টাকা থেকে ৩৯.৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ১.২০ টাকা।

২০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১১৭ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ২১.৬৯ এবং হালনাগাদ অনিরীক্ষিত ইপিএসের ভিত্তিতে ১৮.৮৬। কোম্পানিটির শেয়ার রয়েছে ১১ কোটি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৭০টি।

ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৬০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ০ দশমিক ০৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৩৯ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার।