ipo lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জমজমাট হয়ে উঠেছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র বাজার। সাম্প্রতিককালে বেড়েছে আইপিও অনুমোদন। বেশ কিছু কোম্পানি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে চলতি বছরে অনুমোদন পাওয়া যে কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেছে সেগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল প্রত্যাশার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। অন্যদিকে আইপিও অনুমোদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতাও বেড়েছে। আর কোম্পানিগুলোকে ঘিরে পুঁজিবাজারে ডুকছে নতুন বিনিয়োগ, বাড়ছে নতুন শেয়ারের যোগান।

কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে আইপিও’র মাধ্যমেই আসতে হয়। পরবর্তীতে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারগুলো লেনদেন হয়। অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যারা ঝুঁকি নিতে চায় না মূলত তাদেরই আগ্রহের শীর্ষে থাকে আইপিও’র কোম্পানি। কারণ আইপিওতে শেয়ার না পেলেও বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। তাই ঝুঁকি এড়াতেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকে আইপি’র কোম্পানি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৬টি কোম্পানিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিগুলো হলো- নাহি অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড, আমরা নেটওয়ার্কস, ওইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড লিমিটেড, বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেড এবং নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেড।

বিবিএস ক্যাবলস লিমিটেড : ফিক্সড প্রাইসে আসা এই কোম্পানি আইপিওতে প্রায় ৪৮ গুণ আবেদন জমা পড়ে। আইপিওতে কোম্পানিটি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে ২ কোটি শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। আইপিওতে যারা শেয়ার পেয়ে ছিলেন লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই তারা নয় গুণ মুনাফা করেছেন।

নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেড : আইপিওতে এই কোম্পানির শেয়ারে ২৮ গুণ বেশি আবেদন করেন বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে এ কোম্পানির লেনদেন উভয় পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে। আইপিও’র মাধ্যমে ৪ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে মোট ৪৩ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিটি।

আমরা নেটওয়ার্কস : কোম্পানিটির আইপিওতে ২২ দশমিক ৫ গুণ আবেদন জমা পড়েছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওতে আসা এই কোম্পানি ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ ৭ টাকা তুলবে। এই শেয়ারের মধ্যে ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৭৮৬টি শেয়ার পাবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা; যা মোট শেয়ারের ৪০ শতাংশ।

৩৫ টাকা দরে এই শেয়ার বিক্রি হবে। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২১ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫১০ টাকা সংগ্রহ করা হবে। বাকি ৬০ শতাংশ বা ৯০ লাখ ১৪ হাজার ৪২৩টি শেয়ার পাবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৫ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৭ টাকা।

নাহি অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড : ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন ম্যাশিনারিজ আমদানি, বিল্ডিং নির্মাণ, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিওর খরচ বাবদ এই টাকা ব্যয় করবে কোম্পানিটি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত আইপিও আবেদন চলবে।

বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড : বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে এই কোম্পানিকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলেক্ট্রনিক বিডিংয়ের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করবে। কাট-অফ প্রাইসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার শেয়ার বিক্রি শেষ হবে, সেই দরে দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।

পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থের একটি বড় অংশ দিয়ে কারখানার আধুনিকায়ন ও মেশিনারি আমদানি করবে কোম্পানিটি। যাতে ব্যয় করা হবে ১২০ কোটি টাকা। আইপিওতে উত্তোলিত অর্থ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে ঋণ পরিশোধে। কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। ইনস্টলেশন কস্টে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা। যন্ত্রাংশে খরচ হবে ৩ কোটি টাকা। ভূমি ও ভ‚মি উন্নয়নে খরচ হবে ৩ কোটি টাকা, আইপিওতে খরচ হবে ৫ কোটি টাকা।

ওইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড লিমিটেড : আইপিওতে কোম্পানিটি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করবে। বাজারে দেড় কোটি শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটি ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলিত এ অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি মুলধনী যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, কাচামাল ও আইপিও বাবদ খরচ মেটাবে। আগামি ৫-১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইপিও’র চাঁদা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজিবাজারে আসতে ইতমধ্যে ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে অ্যাপোলো হাসপাতাল, বেঙ্গলপলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, রানার অটোমোবাইলস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, ডেল্টা হসপিটাল, ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং স্কয়ার নিট কোম্পোজিট লিমিটেড। এ ছাড়াও আরও কিছু কোম্পানি ফিক্সড প্রাইসে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে।