lago monnoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তদন্তের মুখে দাম বাড়ছে মুন্নু ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক। তবে তদন্ত চলাকালে যদি শেয়ারের দাম বিক্রেতা শুন্য হয়ে যায়। তাহলে তদন্ত কমিটি করে লাভ কি। এ প্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। এখন বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন তদন্ত কমিটি কি আদৌ ও আলোর মুখ দেখবে। নাকি মানুষ দেখানে তদন্ত কমিটি। এছাড়া বিএসইসি ভুমিকা কি!

এদিকে মুন্নু সিরামিকস অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।গত বুধবার দুই সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপপরিচালক মুস্তারি জাহান ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ ব্যবস্থাপক দেবাশিষ রায়। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি স্টান্ডার্ড সিরামিকসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিও তদন্ত করবে।

বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যের সংশ্লিষ্টদের এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের শেয়ার কেনাবেচায় আইন লঙ্ঘনেরও প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের সব লেনদেন বিশদভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে । এতে করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কারসাজি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশায় বিষয় সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই মুন্নু ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক মত দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে।

এছাড়া কিছু কোম্পানির আগাম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগেই জেনে যাচ্ছেন মুষ্টিমেয় বিনিয়োগকারী। তারা অতিরঞ্জিত করে ওই তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেয়ারবাজারে। এতে করে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। তবে এই ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর বেশদিন বাড়তি অবস্থানে থাকে না। পরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বাঁচানো নিয়ে সংকটে পড়তে হয়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে লেনদেন বাড়ছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। এর অর্থ হল বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়ছে। দুর্বল কোম্পানির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে বিএসইসি বলছে, এ ব্যাপারে বাজারে তাদের যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর আবু আহমেদ বলেছেন, দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে দাম কম দেখে কম পুঁজির মালিকেরা এই ধরনের কোম্পানির শেয়ার বেশি কেনে। এতে করে মাঝে মাঝে শেয়ার দর বেড়ে যায়, আবার কমেও। এটা অনেক সময় বাজারের ভালো ইঙ্গিত দেয় না। এসব ক্ষেত্রে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকতে পারেও বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের। এক মাসের ব্যবধানে এর শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কিংবা বাজারসংশ্লিষ্টদের কেউই এই দর বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ সম্পর্কে অবগত নন, কিন্তু তারপরও লাগামহীনভাবে বাড়ছে মুন্নু সিরামিকের দর। আর এতে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের যেমন অতি মূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়, তেমনি সংশ্লিষ্টদেরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। কোনো কারণ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার প্রতিনিয়ত বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়বে, এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, এক মাস আগে হঠাৎ করেই এর শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে দর বৃদ্ধি কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও পরে তা সবার কাছেই অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ডিএসই কর্তৃপক্ষেরও। যে কারণে তারাও প্রতিষ্ঠানটিকে দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেন।

জবাবে মুন্নু সিরামিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে শেয়ারের দর বাড়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কিন্তু এরপরও দর বৃদ্ধি থেমে নেই। অব্যাহত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বৃদ্ধি। গতকাল সোমবারও এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিইর বিবেচনায় অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই শেয়ার। বর্তমানে এই শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ৬২০ দশমিক ৬৩, যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন সুবিধা বন্ধ রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত এক মাসে সিরামিক খাতের এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ বা ১৩৪ শতাংশ। এক মাস আগে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা, গতকাল যা লেনদেন হয় ৯৯ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতি শেয়ারে দর বেড়েছে ৫৭ টাকা।

এদিকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের চেয়ে মুনাফা কমেছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ৩০ লাখ টাকা। ২০১৬-তে তা নেমে এসেছে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। এক সময়ের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা মন্দা থাকার কারণে ২০১২ সাল থেকে টানা পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে কোনো রকমের ক্যাটাগরি টিকিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের প্রকৃত মুনাফা বা ইল্ড-ও কমে গেছে। আগের বছর প্রকৃত মুনাফা দুই দশমিক ২০ শতাংশ হলেও ২০১৬ সালে তা দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৩৬ শতাংশে।

এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই মৌলভিত্তির বিচার না করে অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে বিনিয়োগ করেন, যে কারণে তারা বারবার প্রতারিত হন। পুঁজির নিরাপত্তা রাখতে হলে তাদের এসব পরিহার করে দেখেশুনে ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত।’

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া দশমিক শূন্য চার শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন বিদেশিরা।

অন্যদিকে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই নোটিস পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো রকম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দর বাড়ছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৫২ সপ্তাহে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩০ টাকা থেকে ৫৩ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত। উল্লেখ্য, ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।